বিএসএমএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন শুরু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট শুরু হয়েছে। সোমবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে ২০ জনেরও বেশি চিকিৎসক এই ট্রান্সপ্লান্ট কার্যক্রমে অংশ নেন। কিডনি গ্রহীতা হলেন, পিরোজপুরের বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী সুজন রায়। আর কিডনি দাতা হলেন, ৩১ বছর বয়সী তারই ছোট ভাই সুসেন রায়।

অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল জানান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রয়েছে দেশের সব চাইতে আধুনিক ইউনিক অপারেশন থিয়েটার; যা বাংলাদেশের আর কোথাও নাই। এখানে সপ্তাহের ৬ দিনই ট্রান্সপ্ল্যান্ট সংক্রান্ত ওটি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।

কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালকে স্বাস্থ্য খাতের পদ্মা সেতু বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, অর্গান ট্রান্সপ্লান্টসহ এ ধরনের চিকিৎসাসেবা নিতে রোগীদের আর দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। কম খরচে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। দেশের অর্থ বিদেশে গিয়ে ব্যয় করে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন নাই বলে মন্তব্য করেন ভিসি।’

তিনি জানান, বিএসএমএমইউয়ে নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকরা উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য অধ্যয়ন করছে। এসব দেশের রোগীরাও বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা নেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রয়েছে বিশ্বমানের পাঁচটি সেন্টার। রয়েছে দেশের সেরা অপারেশন থিয়েটার। এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের পর দেশের চিকিৎসা সেবা দানে বিশেষ করে সর্বাধুনিক উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। কয়েকশ’ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রোগীদের যাতে বিদেশে যেতে না হয় এবং দেশেই সর্বাধুনিক চিকিৎসা পায় সেই লক্ষ্যে ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন করেন। পরবর্তী সময়ে এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ রোগী দেখা শুরু করেন। এ পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার রোগী সেবা নিয়েছেন। ল্যাবরেটরি টেস্ট, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ইটিটি, ইকোসহ মোট ৪০ হাজারেরও বেশি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ৫ জুলাই আন্তঃবিভাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ১২২ জন রোগী সেবা নিয়েছেন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৫ জন। এ সময়ে ১৬ জন রোগীকে অপারেশন সেবা দেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টকে বেগবান করতে ক্যাডভারেকি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। ব্রেনডেথ একজন রোগীর কিডনি, কর্নিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গদানের মাধ্যমে ৮ জন রোগীর ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে তাদেরকে নতুন জীবনদান করা সম্ভব। আর এ জন্য ক্যাডভারেকি ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ভিসি জানান, ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়া লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের রোগী ও লিভার দাতা এবং ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর মাধ্যমে যে দুই রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্রান্ট এবং দুই জনের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল তারা সকলেই সুস্থ আছেন।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল জানান, বিএসএমএমইউ-এ এ পর্যন্ত ছয় শতাধিক রোগীর ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে আট জন ভর্তি রোগীসহ আরও ৩০ জন রোগীর কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার অপেক্ষায় রয়েছেন।

এসময় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, নার্সিং অনুষদের ডিন ও অ্যানেসথেশিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বনিক, কিডনি (নেফ্রোলজি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. ইসতিয়াক আহম্মেদ শামীম, পরিচালক (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন প্রমুখসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।