চিকিৎসায় মৃগীরোগ ভালো হয়: বিএসএমএমইউ উপাচার্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সারা বিশ্বে ৫০ মিলিয়ন মানুষ মৃগী রোগে আক্রান্ত। এই রোগ যেকোনও বয়সের মানুষের হতে পারে। যদি কোনও শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয় সমাজ তাকে অস্পৃশ্যভাবে । এটা ঠিক নয়।  এ রোগ চিকিৎসায় ভালো হয়। এ রোগ যদি শুরুতে ধরা যায় ও চিকিৎসা দেওয়া যায় তাহলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারে। এ রোগের সব ধরণের চিকিৎসা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিশু নিউরোলোজি বিভাগ ও ইনিস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিসঅর্ডার অ্যান্ড অটিজমে (ইপনা) হয়ে থাকে।

বুধবার (৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের  ই ব্লক অডেটোরিয়ামে মৃগী সচেতন মাস উপলক্ষে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের আয়োজন করে  ইপনা।

সেমিনারে শিশু নিউরোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাজী আশরাফুল ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সানজীদা আহমেদ একটি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেমিনারের শুরুতেই বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার  আঞ্চলিক পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদকে অভিনন্দন জানানো হয়।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আর্ন্তজাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের যত অর্জন সব কিছুই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার যোগ্য উত্তরসূরী দ্বারাই অর্জিত হয়েছে।  সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অটিজম বিশেষজ্ঞ ড. সায়মা ওয়াজেদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাই। তার অনুমতি সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সংবর্ধনা দিতে চায়।

সেমিনারে বলা হয়,  মৃগীরোগ বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে সাধারণ স্নায়ুবিক রোগ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষের মৃগীরোগ রয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে। এটি অনুমান করা হয়, মৃগীরোগে আক্রান্ত ৭০ শতাংশ মানুষ খিঁচুনিমুক্ত থাকতে পারে, যদি সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয় এবং চিকিৎসা দেওয়া যায়। জীবনের প্রথম ১০ বছরে প্রায় ১৫০ শিশুর মধ্যে একজনের মৃগী রোগ ধরা পড়ে। বাংলাদেশে মৃগী রোগের প্রকোপ প্রতি ১০০০ জনে ৮ দশমিক ৪ জন। শিশুদের মধ্যে মৃগীরোগ বেশি দেখা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের মৃগীরোগ সিনড্রোম পাওয়া যায়। প্রতিটি ধরনের চিকিৎসা এবং আরোগ্য সম্ভাবনা আছে।

সেমিনারে আরও বলা হয়, কিছু মৃগীরোগ ওষুধের মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য। কিছু আছে যা ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং মস্তিষ্কের বিকাশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। খিঁচুনির ওষুধ ছাড়াও কিছু বিকল্প চিকিৎসা বিদ্যমান রয়েছে। বিকল্পগুলি হলো কিটোজেনিক ডায়েট, ইমিউনোথেরাপি, নিউরোস্টিমুলেশন, এপিলেপসি সার্জারি। মৃগী রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। শিশুদের এ রোগ শুরুতেই নির্ণয় করা সম্ভব হলে এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা গেলে দীর্ঘমেয়াদি অক্ষমতা প্রতিরোধ সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন ) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ,  মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, শিশু নিউরোলোজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান  অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান।

সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে ছিলেন শিশু নিউরোলোজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোপেন কুমার কুন্ডু, শিশু নিউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা.  কানিজ ফাতেমা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইপনার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহীন আখতার। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন  ইপনার ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর ডা.  মাজহারুল মান্নান।