বিশ্বের ৭৭ শতাংশ ক্যানসার রোগী হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ২০৩০ সালে আমরা যখন এসডিজি অর্জন করবো, তখন সারা বিশ্বের ৭৭ শতাংশ ক্যানসার রোগী থাকবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। আর বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ রোগী থাকবে এই অঞ্চলে। এটা ভয়াবহ অবস্থা।

রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এভার কেয়ার হাসপাতাল আয়োজিত ক্যানসার সচেতনতামূলক বিশেষ গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী আছে ২২ লাখ। প্রতি বছর মারা যাচ্ছে দেড় লাখ রোগী। ২০৩০ সালে যখন এসডিজি অর্জন করবো, তখন বিশ্বের ৭৭ শতাংশ ক্যানসার রোগী হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। আর বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ রোগী থাকবে এই অঞ্চলে। সুতরাং আমরা খারাপ অবস্থায় আছি।

খারাপ অবস্থার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর একটা হচ্ছে আমরা অবহেলা করি রোগকে। কিংবা আমাদের রোগ আছে, তবু আমরা এড়িয়ে চলি। এমনকি আমরা ব্রেস্ট ক্যানসারের রোগীকে চতুর্থ স্টেজে নিয়ে আসি। যাকে আর বাঁচানো যায় না। অথচ আর্লি ডায়গোনোসিস নিজেই করতে পারে। সেটা যদি আমরা শেখাতে পারতাম, তাহলে অনেক রোগীকে বাঁচাতে পারতাম।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিনটি রোগ কিডনি, হার্ট ও ক্যানসারকে প্রাধান্য দিয়ে আট বিভাগে আটটি হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা বিভাগ অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারবো। কিন্তু দুই লাখ রোগীর জন্য আমাদের দুটি রেডিওথেরাপি সেন্টার থাকার কথা, সেদিকে গেলাম না। আমাদের দরকার ৭০টা সেন্টার, আছে ৩৫টা। মানে ৫০ শতাংশ সেন্টার আছে।

আস্থাহীনতার জন্য রোগীরা চিকিৎসার জন্য পাশের দেশে চলে যায় মন্তব্য করে উপাচার্য বলেন, আমাদের দেশে যা হতো, সেখানে গেলেও একই অবস্থা হয়। কিন্তু ওই দেশে চিকিৎসার পর তাদের আর কোনও অর্থ থাকে না। এ জন্য আমাদের আর্লি ডায়গোনোসিস করা প্রয়োজন। রোগীদের বোঝাতে হবে যে যেখানেই যাওয়া হোক, চিকিৎসা একই হবে। এতে বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমত। আর আমরা যদি বাইরে যাওয়া রোধ করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে দেশের আর্থিক ক্ষতি হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির বলেন, আমরা যদি প্রথম অবস্থাতেই ক্যানসার শনাক্ত করতে পারি, তাহলে সেটা শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এতে পাশের দেশগুলোয় যেতে হবে না। আর ক্যানসারের পরবর্তী চিকিৎসার (কেমোথেরাপি) ধাপগুলো দেশের মানুষের জন্য একটা অর্থনৈতিক বড় চাপ। এর চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তাই আমরা মনে করি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশে কর্মক্ষম লোক অনেক। তাদের সুস্থ রাখা জরুরি। তাই আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জোর দেওয়া খুবই জরুরি। আমি মনে করি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানো উচিত। এই বাজেট জিডিপির ২ শতাংশ হওয়া উচিত।

এ সময় বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিয়েশন অনকোলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী মোশতাক হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের ২৫০টি মেশিন দরকার সারা দেশে। অথচ সচল মেশিন আছে মাত্র ৪৪টি।

এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, রেডিয়েশন চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রশিক্ষিত জনবলের দিকে নজর দেওয়া জরুরি।

এভারকেয়ার হাসপাতালের ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করা দরকার হয়। এর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমাদের একে অপরকে সাহায্য করা প্রয়োজন।