বিএসএমএমইউয়ে তৃতীয় বোনম্যারো প্রতিস্থাপন সম্পন্ন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন (অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন) সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মোহাম্মদ শামসুদ্দিন খান (৫৬) নামে ওই রোগী এখন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

বুধবার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ ব্লকে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সালাহউদ্দীন শাহ।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি মাল্টিপল মায়েলোমার রোগে আক্রান্ত মোহাম্মদ শামসুদ্দিন খানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সম্পন্ন করেছি। চিকিৎসা শেষে তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। আমরা তাকে আগামীকাল ডিসচার্জ করে দেবো। তিনি রাজবাড়ী থেকে এসেছেন।

সালাহউদ্দীন শাহ বলেন, বর্তমানে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন রক্ত রোগের আধুনিকতম চিকিৎসাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সারা বিশ্বে লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমাসহ রক্তের ক্যাল্লারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। লিউকেমিয়াসহ রক্তের ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রেও স্থায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি হচ্ছে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন।

তিনি আরও বলেন, ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রক্রিয়া চলাকালীন চিকিৎসা-সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে। জটিলতাগুলোর চিকিৎসা করার পরেও যদি তা নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে তা থেকে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। চিকিৎসা সম্পন্ন করার পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে রোগীকে প্রথম ১০০ দিন নিয়মিত ফলোআপে রাখতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কেমোথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেবা চালু আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যেও উন্নত মানের বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন সেবা দেওয়া হচ্ছে। মাত্র তিন লাখ টাকার মধ্যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে এখানে।

উপাচার্য বলেন, গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত কাজ হবে। সারা দেশের রোগীরা এখানে এসে যাতে বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসাসেবা পান, তা নিশ্চিত করা হবে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন অ্যান্ড স্টেম সেল থেরাপি সেন্টারে প্রতি মাসে যাতে কমপক্ষে পাঁচ জন রোগীকে এই সেবা দেওয়া যায়, তা-ও নিশ্চিত করা হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই এই সেন্টারের রূপকল্প জানিয়ে দীন মোহাম্মদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগকে বিশ্বমানের হেমাটোলজি চিকিৎসাকেন্দ্রে পরিণত করতে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করতে নবনির্মিত বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. রেজাউর রহমান প্রমুখ।