জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতিবাদ হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের

বিশেষায়িত বিভাগ বিবেচনা করে স্বাস্থ্যকে ক্যাডার থেকে বাদ দিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ করতে যাচ্ছে, সেটির প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। ‘স্বাস্থ্য’ ও ‘শিক্ষা’র জন্য আলাদা কমিশন করার যে আলোচনা হচ্ছে, তাও প্রত্যাখ্যান করেছে সরকারি চাকরিজীবী চিকিৎসকদের সংগঠনটি। 

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মো. নেয়ামত হোসেন এবং সদস্য সচিব উম্মে তানিয়া নাসরিন স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে এসব কথা বলা হয়। 

এর আগে মঙ্গলবার সচিবালয়ে মতবিনিময়কালে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্তি করার বিষয়টিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এগুলো বিশেষায়িত বিভাগ; এগুলো ক্যাডার থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।‘ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মুয়ীদ চৌধুরী আরও বলেন, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য আলাদা কমিশন করার পক্ষে মতামত তুলে ধরবে সংস্কার কমিশন।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ক্যাডার কাঠামোর বাইরে রাখার যে সুপারিশ সংস্কার কমিশন করতে যাচ্ছে, সেই সংস্কার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অনভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পদায়ন করায় স্বাস্থ্য খাত বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুগপোযোগী হয়নি। উল্টো পথে হেঁটে আমলাতান্ত্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কায়েম হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল ও নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য ক্যাডারের দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করে প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব।

এতে বলা হয়, সংস্কারের মাধ্যমে বৈষম্য নিরসন, গতিশীল ও জনবান্ধব জনপ্রশাসন তৈরির লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশন প্রকৃত সংস্কার প্রস্তাব বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকে ক্যাডার-বহির্ভূত করার হঠকারী সুপারিশ করা হচ্ছে। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন তৈরি ও বৈষম্যবিরোধী মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সুপারিশ প্রত্যাহার করা না হলে প্রশাসনিক সংস্কার ব্যর্থ হবে।

সংস্কার কমিশন কর্তৃক বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা ব্যতীত এমন প্রস্তাবনা তৈরি এবং গণমাধ্যমে এক তরফাভাবে প্রচার করা সুবিবেচনা প্রসূত নয়। এতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত দক্ষতার সুস্পষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও জনগণের প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিতে পারে। উদ্ভুত যেকোনও নেতিবাচক পরিস্থিতির দায়ভার বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বহন করবে না। আমরা সংস্কার কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাই, তবে দূরভিসন্ধিমূলক সুপারিশকে সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে মানা হবে না।

হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দেশের প্রত্যন্ত ইউনিয়ন থেকে রাজধানী পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম চিকিৎসা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপালনকারী গ্রুপ বিসিএস হেলথ ক্যাডারের অফিসাররা। আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানাতে চাই, হেলথ ক্যাডারের সাথে আলোচনা ছাড়া কোনও সংস্কার প্রস্তাব মেনে নেওয়া হবে না।