করোনা সংক্রমণ

৯ দিনে ২৭ জন শনাক্ত, আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কয়েক হাজার রোগী আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি পাওয়া যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে ২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা এখনই আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।

সোমবার (৯ জুন) রাতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আবহাওয়ার কারণে মানুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আগের মতো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যেমন- হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, এগুলো মেনে চললে করোনা থেকে সুরক্ষা থাকা সম্ভব।

তিনি বলেন, করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু নিয়েও সচেতন হতে হবে। একসঙ্গে দুটি ভাইরাসে আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সুতরাং, আমাদের প্রতিরোধের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। লক্ষণ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। যাদের অন্যান্য রোগ আছে, তারা করোনা আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষ করে বয়স্ক যারা তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিল রোগ আছে, তারা আক্রান্ত হলে জটিলতা তৈরি করতে পারে। এজন্য এখনই সচেতন হতে হবে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে দেশে নতুন করে করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এর আগের দিন চার জনের নমুনা পরীক্ষায় তিন জনের শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ দিনের ব্যবধানে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ছয় জন।

এদিকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক ব্যবহারে সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে একজনের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, করোনায় মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি পুরুষ। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত ৪ জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের নতুন সাব ভ্যারিয়েন্ট বিশেষ করে অমিক্রনে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রামক দেশ এবং বাংলাদেশ হতে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রামক দেশে ভ্রমণরত নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমান বন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোতে সার্ভেল্যান্স জোরদার এবং রিস্ক কমুনিকেশন কার্যক্রম জোরদার করতে সচেতনতামূলক এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়৷

সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনায় বলা হয়, বারবার প্রয়োজন মতো সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড), নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না, হাঁচি-কাশির সময় বাহু,  টিস্যু ও কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখতে হবে।

দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমান বন্দরগুলোতে আইএইচআর (আইএইচআর ২০০৫) স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করা, দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে থার্মাল স্কান্যার বা ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা, চিকিৎসা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান মাস্ক, গ্লোভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখা।

জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়৷

সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়দের ক্ষেত্রে বলা হয়— অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।

রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন। প্রয়োজন হলে আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে (০১৪০১-১৯৬২৯৩)।  এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে রেল, মেট্রোরেলে মাস্ক ছাড়া যাতায়াত না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে।