বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, মানা হচ্ছে না নির্দেশনা

দেশে হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ জানেনই না দেশে আবারও করোনা শুরু হয়েছে।

শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিন দেখা যায়, ঈদুল আজহার ছুটি শেষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে ফিরছে কর্মজীবী মানুষ। কিন্তু সবাই উদাসীন। নেই ন্যূনতম সতর্কতা। দু-একজন মাস্ক পরেছে ধুলোবালি থেকে বাঁচার জন্য। তবে মাস্ক পরাদের অন্য নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি।

শরীয়তপুর থেকে বাসে এসেছেন হেমায়েত উদ্দিন। অন্য যাত্রীদের মতো তিনিও বাস থেকে যাত্রাবাড়ীতে নামেন। ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, করোনার বিষয়টা ফেসবুকে দেখেছি। কিন্তু এখন আর এটাকে কঠিন কিছু মনে হচ্ছে না। সরকার কী কী নির্দেশনা দিয়েছে দেখিনি।

অধিকাংশ মানুষ জানেনই না দেশে পুনরায় করোনা শুরু হয়েছে

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মারিয়া খাতুন। চাঁদপুর থেকে সায়েদাবাদ এসেছেন। যাবেন মিরপুর। তিনি বলেন, করোনার বিষয়ে কোথাও কোনোকিছু চোখে পড়েনি। মাস্ক পরার কথাও কেউ বলেনি। সরকার সতর্কতা বাড়ালে আমরাও সতর্ক হবো।

যাত্রাবাড়ী এলাকার অটোরিকশা চালক আক্তার হোসেন বলেন, করোনা শুরু হওয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশনা দেখিনি। এ এলাকায় (যাত্রাবাড়ী) কোনও মাইকিং হয়নি।

সায়েদাবাদ এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন আবুল কালাম। তিনি মাস্ক পরেছেন। করোনার বিষয়ে তিনি বলেন, সারা দিন রাস্তায় পড়ে থাকি। ধুলোবালি থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত কয়েকটা মাস্ক ব্যবহার করি। সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক দেওয়া হয়েছে। করোনার বিষয়ে সেভাবে কোনও নির্দেশনা পাইনি।

রাজধানীতে ফিরছে কর্মজীবী মানুষ, নেই ন্যূনতম সতর্কতা

মাস্ক পরা অবস্থায় ভিড়ের মধ্যেই গন্তব্য হেঁটে যাচ্ছিলেন রায়হান হোসেন। কথা হলে তিনি জানান, বাইরে বের হলে মাস্ক পরা তার নিত্যদিনের অভ্যাস। করোনার বিষয়ে শুনেছেন। কিন্তু অন্যান্য সতর্কতা মানা শুরু করেননি। 

গত ৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে একজনের মৃত্যু হয়। ১৩ জুন মারা যান আরও দুজন। এ সময় নতুন করে ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ জন্য ১১ জুন দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর এক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা নির্দেশনা তুলে ধরেন।

সেখানে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোতে নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনসাধারণের জন্য করণীয়

১. জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার।

২. শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত মাস্ক পরা।

৩. হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা।

৪. ব্যবহৃত টিস্যু নিরাপদভাবে ফেলা।

৫. নিয়মিত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজারে হাত ধোয়া।

৬. অপরিষ্কার হাতে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ না করা।

৭. আক্রান্তদের থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।

সন্দেহভাজন রোগীদের জন্য পরামর্শ

১. উপসর্গ থাকলে বাড়িতে বিশ্রামে থাকা।

২. রোগীকে মাস্ক পরতে উৎসাহ দেওয়া।

৩. সেবাদানকারীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা।

৪. প্রয়োজনে আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) বা স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) যোগাযোগ।