রাজধানী ঢাকার ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। যেখানে গত বছরের মে মাসে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় লার্ভার হার বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আর রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
বুধবার (১৮ জুন) বিকালে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।
সেমিনারে জানানো হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে এডিস মশার বিস্তার নিয়ে জরিপ করা হয়েছে, সর্বশেষ জরিপ হয়েছে গত মে মাসে। তারই ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় আজ।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি) প্রতিবছর আইইডিসিআর এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে এডিস মশার বিস্তার ও ঝুঁকি মূল্যায়নে মোট তিনটি জরিপ করে থাকে। প্রাক-বর্ষা, বর্ষাকালীন এবং বর্ষার পরবর্তী সময়ে। বর্ষার আগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করতে প্রাক-বর্ষা জরিপ সাধারণত এপ্রিল থেকে মে মাসে হয়; ফলাফল প্রকাশ হয় মে মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা জুনের প্রথম সপ্তাহে। বর্ষাকালীন জরিপ হয় জুন-জুলাই মাসে, যখন জমে থাকা পানিতে মশা জন্মানোর ঝুঁকি বাড়ে। এরপর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে হয় বর্ষা পরবর্তী জরিপ, যা বর্ষার পর পরিস্থিতি বিশ্লেষণে সহায়তা করে।
তিনি জানান, এবারে প্রাক বর্ষা জরিপ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ, গত বছর হয়নি বর্ষা পরবর্তী জরিপ। তবে মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আইইডিসিআর এবারের জরিপ করেছে।
ফলাফল তুলে ধরে তিনি জানান, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ও মাগুরা সিটি করপোরেশন এলাকায় আইইডিসিআর এই জরিপ পরিচালনা করে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৮, ১২, ১৩, ২২ আর ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪, ২৩, ৩, ৪৬, ৪৭, ৩১ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স ২০ এর বেশি অর্থ্যাৎ এসব জায়গা ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। এই ‘ব্রুটো ইনডেক্স’র মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
জরিপে দেখা গেছে, এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, একক বাড়িতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ফাঁকা স্থানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ।
জরিপের ফলাফলে তাহমিনা শিরীন বলেন, ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেশি। ঝিনাইদহ পৌরসভায় ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৬০ পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মাগুরাতে ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পিরোজপুরে ২০ আর পটুয়াখালি পৌরসভায় রয়েছে ১৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
ডেঙ্গুর পাশাপাশি এডিশ মশা বাহিত চিকুনগুনিয়া ও জিকা প্রশ্নে অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন বলেন, একই প্রক্রিয়াতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস শনাক্ত করা যায় একসঙ্গে একই পরীক্ষায়, এর জন্য আলাদা করে কোনও পরীক্ষা করতে হয় না। গত বছরে জিকাতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়, তবে এই বছরে কোনও রোগী শনাক্ত হয়নি। সেই সঙ্গে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে কিছু চিকুনগুনিয়ার রোগীও পাওয়া গিয়েছে। এবারেও ৪০০ এর মতো রোগী পাওয়া গিয়েছে, তবে চলতি বছরে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি।