করোনাকালে বিষণ্ণতায় ভুগছে ৪৬ শতাংশ মানুষ: আইইডিসিআর

বৈশ্বিক মহামারি পরিবর্তন করেছে মানুষের মনোজগৎ, তা আমরা আঁচ করতে পারি কয়েকটি গবেষণার ফলাফলের প্রেক্ষিতে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, কোভিডকালে মানসিক সমস্যা বাংলাদেশেও বেড়ে যাচ্ছে।

গতকাল শনিবার (১৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইইডিসিআর।

আইইডিসিআর জানায়, কোভিডকালে বাংলাদেশে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৬ শতাংশের মধ্যে বিষণ্ণতা, ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে।

অর্থাৎ সাধারণ সময়ের চেয়ে করোনাকালে বাংলাদেশেও মানসিক সমস্যা বেড়েছে।

আইইডিসিআর আরও জানায়, ২০১৮ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক সাত শতাংশ। এর মধ্যে বিষণ্ণতা ছিল ছিল ৬ দশমিক সাত শতাংশের আর দুশ্চিন্তায় ভুগেছিলেন ৪ দশমিক সাত শতাংশ। এ গবেষণা ছিলো মানসিক স্বাস্থ্যে ইন্সটিটিউটের ২০১৮ সালের।

গত এক বছরে আত্মহত্যা ঘটেছে ১৪ হাজার, যা কিনা তার আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি।

আইইডিসিআর প্রতিবেদনে বলে, সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড নিয়ে কুসংস্কার, স্টিগমা ও ভীতিতে পাঁচজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, চিকিৎসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা, মৃত্যুভয়, অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বেকারত্ব- এসব কারণে বাড়ছে মানসিক সংকট।

একইসঙ্গে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে স্ট্রেস, বার্নআউট হচ্ছে- যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে করণীয় উল্লেখ করে আইইডিসিআর জানায়, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কোনওভাবেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আতঙ্ক মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। মানসিক চাপ হ্রাস করতে হবে।

এইজন্য ঘুমানোর স্বাভাবিক সময় ঠিক রাখা, নিজের পছন্দের বিষয় ও কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, পরিবারের সঙ্গে গুণগত সময় কাটানো, কিছুসময় প্রতিদিন অবশ্যই শারীরিক ব্যায়াম করা ও স্রষ্টার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সর্বোপরি এই কঠিন পরিস্থিতিতেও টিকে আছি, বেঁচে আছি- এজন্য সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

একইসঙ্গে সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া কিন্তু কোনওভাবেই পরিস্থিতি বা রোগ- এসব কারণে করুণা প্রকাশ করা যাবে না।

তবে অতিরিক্ত আতঙ্ক, অস্থিরতা, মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, ঘুমের ধরণ পরিবর্তন ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে অথবা স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআর’র হটলাইনে যোগাযোগ করে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর।