করোনার বেড নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা

শ্রাবণী ঘোষ গত ৪ অক্টোবর রাতে জানতে পারেন তিনি করোনায় আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর মধ্যে কোনটা খালি রয়েছে খোঁজ করে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। খোঁজ নিতে এক বন্ধু সেখানে ফোন করলে জানানো হয়, রোগী না থাকায় সেখানে করোনা ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রোগী বাড়লে আবার খোলার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই করোনা ইউনিট বন্ধ। রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে না।

অথচ করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের নাম রয়েছে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের তালিকায়। সেখানে ১৭৪টি সাধারণ বেড ও ১৬টি আইসিইউর সবগুলোই খালি দেখানো হয়েছে।

শ্রাবণীর বন্ধু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শয্যা খালি না থাকা আর করোনা ইউনিট বন্ধ করে রোগী ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত এক নয়। সেদিন রাতে (৪ অক্টোবর) আমি যদি জানতাম এই হাসপাতালে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না, তা হলে এত হয়রানির শিকার হতাম না। যেহেতু অধিদফতর বলছে, শয্যা ফাঁকা, সেজন্যই খোঁজ নিয়েছিলাম।

করোনা রোগীদের ভর্তি নেওয়া হয়, এমন আরেকটি হাসপাতাল হলো জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসনকেন্দ্র তথা পঙ্গু হাসপাতাল। শুরু থেকে এ হাসপাতালে করোনাক্রান্তদের ভর্তি না করা হলেও জুলাইতে ডেল্টার তাণ্ডবে রোগী বাড়তে শুরু করলে এখানে করোনা রোগীদের ভর্তির জন্য অধিদফতর নির্দেশ দেয়। কিন্তু হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন কেবল পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর যাদের করোনা পজিটিভ আসছে তাদেরকেই ভর্তি করা হচ্ছে, বাইরের করোনা রোগীদের করা হচ্ছে না।

করোনারোগীদের জন্য সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ডিএনসিসি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল। অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে হাসপাতালের ৫৫৪টি বেডের মধ্যে সবগুলো ফাঁকা দেখালেও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সাধারণ বেডে এখনও কিছু রোগী ভর্তি আছেন। যদিও আগের মতো রোগীর চাপ এখন একেবারেই নেই।

এদিকে, ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতালের বেড সংখ্যা ১০৮টি দেখিয়ে অধিদফতর গত ১৫ অক্টোবর থেকে বলছে, সেখানে সবগুলো বেডই ফাঁকা। অথচ হাসপাতালের করোনা ইউনিট প্রধান ডা. আবু রায়হান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে, বেড সব ফাঁকা নয়।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও এ হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের জন্য সাধারণ শয্যা রয়েছে ১২৯টি। বেড ফাঁকা রয়েছে ১২০টি। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিন জানালেন, এ হাসপাতালে করোনা রোগী রয়েছেন ৪০ জন। ফাঁকা আছে ৯০টি বেড।

জানা গেলো, করোনা হাসপাতালের বেড-সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই তথৈবচ অবস্থা আজকের নয়, শুরু থেকেই।

পঙ্গু হাসপাতালে রোগীদের জন্য শুরুতে আইসিইউ থাকার কথা অধিদফতর জানালেও সেখানে আইসিইউ ছিল না করোনা রোগীদের জন্য। হাসপাতালের কর্মকর্তা বলেন, এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের আইসিইউর দরকার হলে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হতো।

টিবি হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ রয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু সেগুলোতে ছিল না ভ্যান্টিলেটর মেশিন।

১৮ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদফতর জানাচ্ছে, রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড ১৭টি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে তিন হাজার ৫৫০টি। এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে তিন হাজার ২৮টি। প্রকৃতচিত্র তা নয়। বাস্তব অবস্থাটা অধিদফতরে আসছে না। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশে করোনার সংক্রমণ কমছে। সেটা অবশ্যই স্বস্তির খবর। এতে করোনা রোগীদের জন্য বেড কমিয়ে সাধারণ রোগীদের জন্য সেগুলোর ব্যবস্থা করা হলে রোগীদের উপকার হবে। কিন্তু কোনও ঘোষণা ছাড়া এমনটা হওয়া উচিত নয়।’

শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘অধিদফতর বলছে শয্যা ফাঁকা, হাসপাতাল বলছে তারা রোগী নেওয়া বন্ধ রেখেছে। শয্যা ফাঁকা থাকা আর ইউনিট বন্ধ হওয়া তো এককথা নয়। ইউনিট বন্ধ হওয়ার কথা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে, নয়তো হয়রানি বন্ধ হবে না। রোগীরা যে সেখানে গিয়ে ফেরত আসছে, সেই হয়রানির জবাব তো তারা অধিদফতরের কাছে পাবে না। কারণ সেখানে কোনও জবাবদিহিতা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।