বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারলম্বায় ১৮৬ ফুট। ওজন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ কিলোগ্রাম, যা ২৯টি হাতির সমান! এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে। বলছি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারের কথা। আগামী মাসে তাদের বহরে যুক্ত হবে আমেরিকার বোয়িং কোম্পানির তৈরি নতুন উড়োজাহাজটি।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে ২০০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি বিমান ক্রয়ের চুক্তি করে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ও দুটি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে। বাকি চারটি ড্রিমলাইনারের মধ্যে দুটি এ বছর ও অন্য দুটি ২০১৯ সালে যুক্ত হবে।
Untitled2এ বছরের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর রুটে চলাচল শুরু করবে ড্রিমলাইনার। ইতোমধ্যে টিকিট বিক্রিও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারবাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে যাওয়া চারটি ড্রিমলাইনারের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হলো— আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস। আগামী ২০ আগস্ট বহরে যুক্ত হবে আকাশবীণা নামের ড্রিমলাইনার। ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি থেকে নেওয়া হয়েছে এর নিবন্ধন (এস২-এজেএস)। এতে আসন সংখ্যা থাকছে ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস।
কারখানায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারড্রিমলাইনারের বিজনেস ক্লাসের একেকটি সারিতে ৬টি আসন আর ইকোনমি ক্লাসের একেকটি সারিতে রয়েছে ৯টি আসন। বিজনেস ক্লাসে আসনগুলো ৬৫ ইঞ্চি পিচ ও ইকোনমি ক্লাসে ৩১ ইঞ্চি পিচ। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়া যাত্রীরা আরমদায়কভাবে বিশ্রাম নিতে পারবেন। দু’পাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একইসঙ্গে জানালার সাটার বন্ধ ও খোলা যাবে বোতাম টিপে। ড্রিমলাইনারের জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। ফলে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড।
ড্রিমলাইনার বিমানের ককপিটশুধু আরামদায়ক নয়, ভ্রমণকে নিরাপদ করতে ড্রিমলাইনারের অবকাঠামোতে থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। এর দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফিট। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য বিমানের তুলনায় উন্নত। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনারে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। বিমানের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শেভরন। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেকট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারডিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দিতে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একইসঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র। এছাড়া রয়েছে বিমানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত গেমস।
Untitled5অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। বিমানে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য বিনামূল্যে ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এরপরও কোনও যাত্রী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে চার্জ দিতে হবে। ১০০ মেগাবাইটের জন্য ৮ ডলার, ৩০০ মেগাবাইটের ১৬ ডলার আর ৬০০ মেগাবাইটের জন্য ৩২ ডলার হারে চার্জ দিতে হবে যাত্রীদের।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারএছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ড্রিমলাইনারে ভ্রমণকালীন যাত্রীরা চাইলে আকাশে কেনাকাটাও করতে পারবেন। এই উড়োজাহাজে অলঙ্কার ও সুগন্ধিসহ বিভিন্ন পণ্য কেনা যাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায়। যাত্রীদের পছন্দমতো খাবারও থাকবে ড্রিমলাইনারে।
Untitled3শুধু তাই নয়, বিমানটির ককপিটেও রয়েছে নতুনত্ব। সেখানে থাকছে হেডআপ ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন পাইলটরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যেকোনও সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ড্রিমলাইনারফ্লাইট শেষে দেশে ফেরার আগেই ড্রিমলাইনারের কোনও সমস্যা আছে কিনা তা জানতে পারবেন প্রকৌশলীরা। তাই ত্রুটি পেলে বিমানটি দেশে পৌঁছানোর আগেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন তারা। ফলে যেকোনও সময় ককপিট থেকে ফ্লাইট অপারেশন রুমের সহায়তা নিতে পারবেন পাইলটরা। একইসঙ্গে আকাশে ওড়ার সময় আইপ্যাড ও ট্যাব ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারবেন তারা।
ড্রিমলাইনার পরিচালনার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিমানের ১৪ জন পাইলট। এছাড়া ড্রিমলাইনার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের ১১২ জনকে।
আরও পড়ুন-
আকাশপথে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বদলে দেবে ড্রিমলাইনার