যেসব খাতে আয় করে সিভিল এভিয়েশন

সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (ফাইল ছবি)দেশের এভিয়েশন খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। দেশের আকাশপথে বেসামরিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো পরিচালিত হয় এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে। এয়ারলাইন্সগুলোর বিভিন্ন চার্জ ও দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরগুলো থেকে আয় হয় তাদের।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের তথ্য দিতে পারেনি সিভিল এভিয়েশন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাটির রাজস্ব আয় ছিল ১ হাজার ৫৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয় ছিল ১ হাজার ৩৩০ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আয় ছিল ১ হাজার ২২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। এছাড়া দেশের বিমানবন্দরগুলোতে অবকাঠামো ভাড়া, বিজ্ঞাপন, গাড়ি পার্কি, দোকান, অফিস স্পেস ভাড়া, জলাশয় ইজারাসহ বিভিন্ন খাত থেকেও আয় করে এই সংস্থা।

নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জের মধ্যে রয়েছে— বিমান ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশন, সিকিউরিটি, বোর্ডিং ব্রিজ চার্জ ইত্যাদি। ঘণ্টা হিসেবে বোর্ডিং ব্রিজ ব্যবহারের জন্য চার্জ দিতে হয় এয়ারলাইন্সগুলোকে। প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ কেজি ওজনের বিমানের জন্য ১০০ ডলার, ১ লাখ কেজি থেকে ২ লাখ কেজির বিমানের জন্য ১৫০ ডলার, ২ লাখ কেজি থেকে ৩ লাখ কেজির জন্য ২০০ ডলার, ৩ লাখ কেজির ওপরে হলে ২৫০ ডলার হারে চার্জ দিতে হয়। এই চার্জ প্রথম দুই ঘণ্টার জন্য। এরপর অতিরিক্ত সময়ে প্রতি আধঘণ্টায় ১ লাখ কেজির চেয়ে কম ওজনের বিমানের জন্য ৬০ ডলার, ১ লাখ কেজি থেকে ২ লাখ কেজি ওজনের বিমানের জন্য ৭৫ ডলার, ২ লাখ কেজি থেকে ৩ লাখ কেজি ওজনের বিমানের জন্য ৯০ ডলার। আর বিমানের ওজন ৩ লাখ কেজির ওপরে হলে ১২৫ ডলার হারে চার্জ দিতে হয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারের জন্য ওভারফ্লাইং ও দেশে চলাচলকারী ফ্লাইটগুলোর এয়ার নেভিগেশন থেকে অ্যারোনেটিক্যাল চার্জ আদায় করা হয়। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ভিন্ন হারে নেভিগেশন চার্জ নেয় সিভিল এভিয়েশন। একই হারে বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নেভিগেশন চার্জ নেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ২ হাজার কেজির ওজনের নিচে বিমানের ক্ষেত্রে ১২ ডলার, ২ হাজার থেকে ৫ হাজার কেজি ওজনের মধ্যে হলে ২৪ ডলার, ৫ হাজার কেজি থেকে ১০ হাজার কেজি ওজনের বিমানের জন্য ৩০ ডলার, ১০ হাজার কেজি থেকে ২০ হাজার কেজি ওজনের মধ্যে হলে ৭৫ ডলার, ২০ হাজার কেজি থেকে ৫০ হাজার কেজি ওজনের বিমানের জন্য ১৫০ ডলার, ৫০ হাজার কেজি থেকে ১ লাখ কেজি ওজনের মধ্যে হলে ৩০০ ডলার, ১ লাখ থেকে ২ লাখ কেজি ওজনের বিমানের জন্য ৪২০ ডলার আর বিমানের ওজন ২ লাখ কেজির ওপরে হলে ৪৫০ ডলার হারে চার্জ দিতে হয়।

অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ২ হাজার কেজি ওজনের নিচে বিমানের ক্ষেত্রে ৭৫ টাকা, ২ হাজার থেকে ৫ হাজার কেজি ওজনের বিমানের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা, ৫ হাজার কেজি থেকে ১০ হাজার কেজি ওজনের বিমানের জন্য ২২৫ টাকা, ১০ হাজার কেজি থেকে ২০ হাজার কেজি ওজনের মধ্যে হলে ৪৫০ টাকা, ২০ হাজার কেজি থেকে ৫০ হাজার ওজনের বিমানের জন্য ৯০০ টাকা, ৫০ হাজার কেজি থেকে ১ লাখ কেজি ওজনের মধ্যে হলে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ১ লাখ থেকে ২ লাখ কেজি ওজনের বিমানের জন্য ৩ হাজার টাকা আর বিমানের ওজন ২ লাখ কেজির ওপরে হলে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা হারে চার্জ দিতে হয়।

সূত্রে জানা গেছে, একটি ড্যাশ-৮ বিমানের জন্য প্রতিবার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিংয়ের চার্জ ২ হাজার ৪০৩ টাকা দিতে হয়। একইভাবে এটিআর-৭২ বিমানের জন্য ৩ হাজার ৯২২ টাকা, এমব্রয়ার-১৪৫ বিমানের জন্য ৪ হাজার ১৭৫ টাকা, বোয়িং-৭৩৭ বিমানের জন্য ১৮ হাজার ৬১৯ টাকা, এমডি-৮৩ বিমানের জন্য ১৯ হাজার ১৪৬ টাকা, এয়ারবাস-৩১০ বিমানের জন্য ৫২ হাজার ৩৩১ টাকা চার্জ দিতে হয়।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেকোনও বিমানবন্দরে ল্যান্ডিংয়ের জন্য একটি ড্যাশ-৮ বিমানের জন্য দিতে হয় ৩৩ হাজার ৯২৪ টাকা, এটিআর-৭২ বিমানের জন্য ৪৬ হাজার ৩১৫ টাকা, এমব্রয়ার-১৪৫ বিমানের জন্য ৪৬ হাজার ৮৩২ টাকা, বোয়িং-৭৩৭ বিমানের জন্য ১ লাখ ১২ হাজার ৩৪০ টাকা, এমডি-৮৩ বিমানের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার ৪১৮ টাকা, এয়ারবাস-৩১০ বিমানের জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার ৫০৮ টাকা চার্জ দিতে হয় সিভিল এভিয়েশনকে।

সিভিল এভিয়েশন অথরিটি নিজেদের আয় থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিমানবন্দর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সিভিল এভিয়েশনের রাজস্ব ব্যয় ছিল ৫৫৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। লোন পরিশোধ করা হয়েছে ৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।