১৯২৭ সালের কথা। মার্কিন পাইলট চার্লস লিন্ডবার্গ কোনও বিরতি ছাড়াই উড়োজাহাজ চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্রান্সের প্যারিস গিয়েছিলেন। এ বছর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স নিউ ইয়র্ক থেকে সিঙ্গাপুরে টানা ২০ ঘণ্টার ফ্লাইট চালু করেছে। তবে পৃথিবী গ্রহের সংক্ষিপ্ততম কয়েকটি ফ্লাইট চমকে দেয় যাত্রীদের। এ বছরের মে মাসে বিশ্বের সংক্ষিপ্ততম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হয়েছে। এমন আরও কয়েকটি ফ্লাইটের তালিকা তৈরি করেছেন এভিয়েশন ব্লগার ও পরামর্শদাতা মিকুয়েল রোস। ফ্লাইট গ্লোবাল ও ব্লুমবার্গের হয়ে কাজ করলেও বর্তমানে অলপ্লেন ডট টিভি মাধ্যমে এয়ারলাইন শিল্পকে তুল ধরছেন তিনি।
রুট: সান্ট মার্টিন (ডাচ ক্যারিবীয় দ্বীপ) থেকে অ্যাঙ্গিলা (ব্রিটিশ উপনিবেশ)
এয়ারলাইন: অ্যাঙ্গিলা এয়ার সার্ভিসেস
দূরত্ব: ১১ দশমিক ৮৭ মাইল (১৯ দশমিক ১১ কিলোমিটার)
সময়: ১০ মিনিট
এয়ারলাইন: আরুবা এয়ারলাইন্স
দূরত্ব: ৫১ মাইল (৮২ কিলোমিটার)
সময়: ১৫ মিনিট
এ বছরের ১৮ মে চালু হয়েছে এই সংক্ষিপ্ত বাণিজ্যিক ফ্লাইট। এর মাধ্যমে ডাচ ক্যারিবীয় দ্বীপ আরুবা থেকে ভেনেজুয়েলার পুন্তো ফিজোতে পৌঁছানো যায় মাত্র ১৫ মিনিটে। ভেনেজুয়েলা সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আরুরা এয়ারলাইন্স সপ্তাহে দু’বার সোম ও শুক্রবার বোম্বারডিয়ার সিআরজে-২০০এলআর দিয়ে যাত্রী পরিবহন করে এই রুটে। আরুবার কুইন বিট্রিক্সি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ভেনেজুয়েলার লাস পিয়েদ্রাস হোসেফা কামেজো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দূরত্ব ৫১ মাইল। ভাড়া জনপ্রতি ২১৫ মার্কিন ডলার (প্রতি মিনিটের জন্য ২৭ ডলার)।
রুট: ওয়েস্ট্রে থেকে পাপা ওয়েস্ট্রে (স্কটল্যান্ড)
এয়ারলাইন: লগ্যানএয়ার
দূরত্ব: ২ মাইল (৩ কিলোমিটার)
সময়: মাত্র ১ মিনিট!
স্কটল্যান্ডের উত্তর উপকূলীয় অঞ্চল অর্কনিকে দু’ভাগ করেছে ওয়েস্ট্রে ও পাপা ওয়েস্ট্রে। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দুই ছোট্ট দ্বীপরাজ্যের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে যাচ্ছে স্কটিশ এয়ারলাইন লগ্যানএয়ার। এই রুটে চলাচল করে আট আসনের ব্রিটেন-নরম্যান আইল্যান্ডারের এয়ারক্রাফট। দুই দ্বীপের মধ্যবর্তী পথ পাড়ি দিতে বিমানটি সময় নেয় ১ মিনিট! বাতাসের গতির ওপর নির্ভর করে কখনও লাগে মাত্র ৫৩ সেকেন্ডে! লগ্যানএয়ারের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশনস) অ্যান্ডি থর্নটন জানান, মূলত অর্কনি দ্বীপের অধিবাসীরা দৈনন্দিন প্রয়োজনে আকাশপথে যাতায়াত করে থাকে। তাদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যাংকার ও স্কুলের ছাত্রছাত্রী। একইসঙ্গে পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় রুট এটি।
রুট: কেগাতা থেকে আপোয়ো (ইন্দোনেশিয়া)
এয়ারলাইন: লগ্যানএয়ার
দূরত্ব: ১ দশমিক ৩ মাইল (২ কিলোমিটার)
ইন্দোনেশিয়ার অন্তর্গত পাপুয়ার পাহাড়ি অঞ্চল কেগাতা ও জনশূন্য আপোয়োর মাঝখানে প্রায় ১.৩ মাইল নৌ-পথ। এই দুই গ্রামের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটি গভীর বন। স্থলপথে ঘন অরণ্য ও পাহাড়ের পাশ ঘেঁষে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে চাইলে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে। তার চেয়ে ভালো আকাশপথ। ম্যাট ডিয়ারডেন’স পিলাটাস পিসি-সিক্স নামক এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট এয়ারক্রাফটে চড়া পাড়ি দেওয়া যায় এই দূরত্ব। পাপুয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রিটিশ আকাশসেবা প্রতিষ্ঠান ডিয়ারডেন একসঙ্গে ১০ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারে একটি বিমানে। কেগাতা এয়ার স্ট্রিপের দৈর্ঘ্য ৩৫০ মিটার। আর আপোয়োর এয়ার স্ট্রিপ ৪০০ মিটারের। পাহাড়ের ওপরে ভেজা পিচ্ছিল ঘাস ও নয়নাভিরাম রানওয়েতে অন্যরকম অভিজ্ঞতাই হয় ভ্রমণকারীদের।
রুট: তেনজিয়ারস (মরক্কো) থেকে জিব্রালটার (ব্রিটিশ উপনিবেশ)
এয়ারলাইন: রয়েল এয়ার ম্যারোক
দূরত্ব: ৪৩ মাইল (৬৯ কিলোমিটার)
দুই দেশের রাজধানীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত ফ্লাইট
রুট: কিনশাসা (গণপ্রজাতন্ত্র কঙ্গো) থেকে ব্রাজ্জাভিল (কঙ্গো প্রজাতন্ত্র)
এয়ারলাইন: এএসকেওয়াই, ক্যামেয়ার-কো, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স
দূরত্ব: ১৬ মাইল (২৬ কিলোমিটার)
সেন্ট্রাল আফ্রিকার দুই কঙ্গোর গল্প বলা যাক। কিনশাসা হলো গণপ্রজাতন্ত্র কঙ্গোর রাজধানী। অন্যদিকে ব্রাজ্জাভিল কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। এটি কঙ্গো-ব্রাজ্জাভিল নামেও পরিচিত। দুই কঙ্গোর রাজধানীর মধ্যবর্তী দূরত্ব ১৬ মাইল। এর মাঝে বয়ে চলছে কঙ্গো নদীর মেটে ও কাদাময় জল। দুই শহরের মধ্যে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন করে দুটি প্রতিষ্ঠান। একটি হলো আফ্রিকান এয়ারলাইন এএসকেওয়াই। তবে ক্যামেরুনের ক্যামেয়ার-কো এয়ারলাইনের সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। এছাড়া ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স একসময় কঙ্গো নদীর ওপর দিয়ে দুই শহরে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। তাদের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এ রুটে চলাচল করতো। তখন সংক্ষিপ্ততম নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটের মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় আকারের বিমান।
রুট: বার্নস্টেপল মিউনিসিপ্যাল বিমানবন্দর থেকে ন্যানটাকেট মেমোরিয়াল বিমানবন্দর (ম্যাসাচুসেটস)
এয়ারলাইন: কেপ এয়ার
দূরত্ব: ৩০ দশমিক ৪৯ মাইল (৪৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার)
উত্তর আমেরিকায় ৩০ মাইলের মতো দূরত্বের মধ্যে বাণিজ্যিক ফ্লাইটের সংখ্যা খুব কম। এর মধ্যে রয়েছে কানাডার বিলি বিশপ টরন্টো সিটি বিমানবন্দর থেকে নায়াগ্রা ডিস্ট্রিক্ট বিমানবন্দরের ৩২ দশমিক ১৬ মাইলের দূরত্ব ও আলাস্কার পিটারসবার্গ মিউনিসিপ্যাল বিমানবন্দর থেকে র্যাঙ্গেল বিমানবন্দরের ৩১ দশমিক ০৯ মাইলের দূরত্ব। তবে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম হলো ম্যাসাচুসেটসে কেপ কডের বার্নস্টেপল মিউনিসিপ্যাল বিমানবন্দর থেকে ন্যানটাকেট মেমোরিয়াল বিমানবন্দর। দূরত্বটা মাত্র ৩০ দশমিক ৪৯ মাইলের। কেপ এয়ার এই রুটে নিয়মিত যাত্রী পরিবহন করে।
সূত্র: সিএনএন