বিমানবালা মেয়ের সঙ্গে ছুটি কাটাতে একাধিক ফ্লাইটে চড়লেন বাবা

হ্যাল ভন ও মাইক লেভি, (ডানে) পিয়ার্স ভনহৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। যেন সিনেমার কোনও দৃশ্য! বিমানবালা মেয়ের সঙ্গে বড়দিনের আনন্দ উপভোগ করতে তার সব ফ্লাইটের টিকিট বুকিং দিলেন একজন বাবা। এই বিস্ময়কর ঘটনার জন্মদাতা মার্কিন নাগরিক হ্যাল ভন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবে মেয়ে পিয়ার্সকে সামনে দেখতে তার এছাড়া বিকল্পও ছিল না।

মার্কিন বিমান সংস্থা ডেল্টা এয়ারলাইনসের বিমানবালা হিসেবে কাজ করেন পিয়ার্স ভন। গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগের দিন ও বড়দিনে বিভিন্ন ফ্লাইটে যাত্রীসেবার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ওই দুই দিন মেয়ে যেসব ফ্লাইটে থাকবে তা জেনে সবকটির টিকিট বুকিং দেন হ্যাল ভন। তার জীবনের এই আবেগপ্রবণ গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন একটি ফ্লাইটের পাশের যাত্রী মাইক লেভি। বুড়ো লোকটিকে ‘ফ্যান্টাস্টিক ফাদার’ (চমৎকার বাবা) হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে মাইক লেভি জানান, ২৪ ডিসেম্বর ফোর্ট মায়ার্স শহরের সাউথওয়েস্ট ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ডেট্রয়েট মেট্রো এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিল ফ্লাইটটি। হ্যালের সঙ্গে আলাপের সময় নিজের বাড়িতে ফেরার কথা জানান তিনি। তখন লেভি জানতে পারেন, হ্যালের মেয়ে একই ফ্লাইটে কাজ করছেন। মেয়ের সঙ্গে বড়দিন উদযাপনের সুযোগ কীভাবে সৃষ্টি করেছেন তাও জানালেন বৃদ্ধ মানুষটি।

সব শুনে তো লেভি অভিভূত। তার কথায়, ‘তিনি বিস্ময়কর একজন বাবা। বড়দিনে মেয়ের সঙ্গে থাকার জন্য ঠিকই পথ বের করেছেন। পিয়ার্স অমায়িক মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন তার বাবা কত অসাধারণ।’

ফেসবুক পোস্টে মাইক লেভি লিখেছেন, ‘ছুটিতে বাড়ি ফেরার সময় হ্যালের পাশে বসতে পেরে আমি আনন্দিত। তার মেয়ে পিয়ার্স ছিলেন আমাদের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। বড়দিনেও তাকে কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু মেয়ের সঙ্গেই বড়দিন কাটাবেন বলে ঠিক করেন হ্যাল। তাই আজ ও আগামীকাল যেসব ফ্লাইটে পিয়ার্সের দায়িত্ব পড়েছে, সবক’টির যাত্রী হওয়ার জন্য টিকিট কিনেছেন হ্যাল ভন। কী চমৎকার একজন বাবা!’

মাইক লেভি জানান, বড়দিনকে সামনে রেখে ছয়টি ফ্লাইটের টিকিট বুকিং দিয়েছিলেন হ্যাল ভন। তার ফেসবুক পোস্ট শেয়ার হয়েছে ৩৯ হাজার বার। এতে লাইক পড়েছে প্রায় দুই লাখ। পরে এই ভাইরাল পোস্ট শেয়ার করেন পিয়ার্স ভন।

জানা গেছে, এ বছরের শুরুর দিকে একটি দুর্ঘটনার শিকার হন হ্যাল ভন। এ কারণে বিমানবন্দরে চলাচলে কিছুটা হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। এখনও ঘাড়ের ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি তিনি। ওই দুর্ঘটনার পর এটাই ছিল তার প্রথম ভ্রমণ।

বড়দিনের সময় মেয়ের প্রতি বাবার এমন ভালোবাসা দেখে অভিভূত ডেল্টা এয়ারলাইনস। তাদের ভাষ্য, ‘ছুটির সময় যাত্রীদের সেবা দিতে কাজ করায় আমাদের সব কর্মী প্রশংসার দাবিদার। একইসঙ্গে ৩০ হাজার ফুট ওপরে একজন অসাধারণ বাবা তার মেয়ের সঙ্গে বড়দিন কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন দেখে ভালো লাগলো।’

প্রতি বছরের বড়দিনে পরিবারের সঙ্গে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দারুণ কিছু সময় কাটানোর সুযোগ হয়। কিন্তু মেয়ে যদি ছুটির দিনে কোনও এয়ারলাইনে কাজ করে তাহলে কী করবেন? এবারের বড়দিনে হ্যাল ভন তেমন পরিস্থিতির সামনে পড়েছিলেন। এরপর তিনি যা করলেন তা এ যুগে সত্যিই বিস্ময়কর!
সূত্র: সিএনএন