বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ছে দেশি ট্রাভেল এজেন্টদের

0b84fe8159b8e0d3db85be6f13e8a525-5c24cc02e2a88বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে দেশি ট্রাভেল এজেন্টগুলোর দ্বন্দ্ব বাড়ছে। গ্রুপ ফেয়ার, টিকিট বিক্রির কমিশন, মনোপলি ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে বিরোধ তাদের। দেশের আইন না মেনে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ব্যবসা করছে বলেও অভিযোগ এজেন্টদের। এসব সংকট নিরসনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানিয়েছে এজেন্টদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। সংকট নিরসন না হলে এজেন্টদের ব্যবসা বন্ধ হবে বলেও শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর টিকিট বিক্রি করে থাকে ট্রাভেল এজেন্টরা। বর্তমানে দেশে তিন হাজারের মতো ট্রাভেল এজেন্ট রয়েছে। এসব এজেন্ট আটাব সংগঠনের সদস্য। সংগঠনটির নেতারা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। তবে ফলপ্রসূ না হওয়ায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে আটাব। গত ১২ ডিসেম্বর বিমান সচিব কাছে আটাবের মহাসচিব স্বাক্ষরিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। চিঠিতে নয়টি বিষয়ে অভিযোগ দেয় এই সংগঠন।

বিমান সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে আটাবের অভিযোগ, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো সরকারি আদেশ ও নিয়মনীতি অমান্য করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ওয়াইকিউ/ওয়াইআর-এর ওপর এজেন্সি কমিশন প্রদানের আদেশ জারি করে। কিন্তু কিছু এয়ারলাইনস এটি না মেনে এজেন্সিগুলোকে কমিশন দিচ্ছে না।

বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ অনুযায়ী, টিকিট বিক্রির ওপর কমিশন কেবল সরকার অনুমোদিত বৈধ এজেন্সি পাবে। তবে এমিরেটসসহ বেশকিছু এয়ারলাইনস তাদের নিজস্ব কাউন্টার থেকে সরাসরি টিকিট বিক্রি করছে ও টিকিট সংগ্রহকারীকে কমিশন দিচ্ছে, যা আইনের পরিপন্থী।

50032035_546540722497513_6813082011482193920_nআটাবের অভিযোগ, বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো অফেরতযোগ্য টিকিট বিক্রি করে প্রচুর আয় করে, যা তাদের স্ব স্ব দেশে পাঠাচ্ছে। তাদের প্রশ্ন, অফেরতযোগ্য টিকিট ব্যবহার না হলে ওই টিকিট বিক্রি বাবদ অর্থ কোথায় যায়? জিডিএস অপব্যবহারের অজুহাতে বিপুল অর্থ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে আটাব। এসব টাকা রেমিট করার কোনও বৈধ পথ নেই। বিদেশে এয়ারলাইনসগুলোর অর্থ প্রেরণ প্রক্রিয়া বৈধ পথে সম্পন্ন হয় কিনা তা তদন্তের দাবিও জানিয়েছে আটাব।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডে ৩০০ ডলারের বেশি পেমেন্ট করা যায় না। তাহলে কীভাবে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হাজার হাজার ডলার মূল্যের টিকিট কেনা যায়? এ বিষয়টিও তদন্তের দাবি জানিয়েছে আটাব। এছাড়া এয়ারলাইনসগুলো বেবিচক থেকে বিভিন্ন ভ্রমণের ভাড়া অনুমোদন করে। সেক্ষেত্রে ভাড়া একই থাকার কথা। কিন্তু আটাবের অভিযোগ, এয়ারলাইনসগুলোর জিডিএস-এর মধ্যে অনৈতিকভাবে ভিন্ন ভাড়া দেখানো হয়।

আটাবের অভিযোগ, এয়ারলাইনসগুলোর অনলাইনে টিকিট বিক্রির প্রক্রিয়া ও পেমেন্ট অনলাইনেই হবে। কিন্ত এমিরেটসসহ বেশকিছু এয়ারলাইন্স অনলাইনে বুকিং দেওয়া যাত্রীদের ফোন করে তাদের অফিসে নিয়ে নগদ টাকা সংগ্রহ করে টিকিট বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। হজের সময় টিকিট বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে তাদের।

এ প্রসঙ্গে আটাবের মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এয়ারলাইনসগুলো নিয়ম মানছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আটাবের সঙ্গে লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পৃক্ত। আমরা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানিয়েছি। নির্বাচন, সরকার গঠনসহ বিভিন্ন কারণে সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়নি। আমরা আশা করছি, বিদেশি এয়ারলাইন্সের পরিবর্তে দেশি এজেন্ট ও যাত্রীদের স্বার্থ দেখে দ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’