পরীক্ষামূলক ফ্লাইটটি জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ১৮ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাত ৯টা ২৭ মিনিটে উড্ডয়ন করে। আজ অস্ট্রেলীয় সময় সকাল ৭টা ৩৩ মিনিটে সিডনি বিমানবন্দরের মাটি ছুঁয়েছে কোয়ান্টাসের বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজ। সব মিলিয়ে পুনরায় জ্বালানি না নিয়েই ১০ হাজারেরও বেশি মাইল (১৬ হাজার ২০০ কিলোমিটার) পাড়ি দিয়েছে এটি। অন্য কোনও বিমান সংস্থার এই অর্জন নেই।
কোয়ান্টাস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যালান জয়েস বলেন, ‘আমাদের গন্তব্য সিডনির দিনের সময়ের সঙ্গে মেলাতে প্রথম ছয় ঘণ্টা আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। এর অর্থ সোজাসুজি জেটল্যাগ কমানো।’
রেকর্ড গড়া ফ্লাইটটি কোয়ান্টাসের প্রজেক্ট সানরাইজের অংশ। দীর্ঘ রুটে বিরতিহীন ভ্রমণে যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করাই এর লক্ষ্য। ২০ ঘণ্টার কাছাকাছি সময়ের ফ্লাইটগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে অস্ট্রেলিয়ান সিভিল এভিয়েশন সেফটি অথরিটিকে এমন তথ্যাদি ভাগাভাগি করবে কোয়ান্টাস।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির গবেষকরা উড়োজাহাজের ফাঁকা জায়গাগুলোকে ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহার করে আবহাওয়া, আলোক পরিকল্পনা, রেসিপি, ব্যায়াম ও জেটল্যাগের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেছেন।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির অধ্যাপক স্টিফেন সিম্পসন মনে করেন, গবেষণাটি জেটল্যাগের ধরন বুঝতে গবেষকদের সহায়তা করবে। তিনি বলেন, ‘দিনরাতের যে বৃত্ত রয়েছে সেই প্রাথমিক বিজ্ঞান থেকে আমরা জানি, প্রস্থান ও আগমনের জায়গাগুলোর মধ্যে সময়ের বিশাল পার্থক্য থাকা এবং পশ্চিমের চেয়ে পূর্ব দিকে ভ্রমণের কারণে বেশি জেটল্যাগ অনুভূত হয়। তবে জেটল্যাগের অভিজ্ঞতার বেলায় একেকজন একেকরকম কথা বলেন। তাই জেটল্যাগ ও ভ্রমণের ক্লান্তি কী কী ভূমিকা রাখে তা জানতে আমাদের আরও গবেষণা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে আকাশপথে দীর্ঘযাত্রার প্রভাব কমানো যেতে পারে।’
ঘুম নিয়ন্ত্রণ করা হরমোনে মেলাটোনিনের মাত্রা পরিমাপের জন্য মোনাশ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা যাত্রীদের মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছেন।
কোয়ান্টাসের সিইও অ্যালান জয়েস জানান, শিগগিরই প্রতিদিন পৃথিবীর দীর্ঘতম বিরতিহীন ফ্লাইট চালু করা তাদের চূড়ান্ত ব্যবসায়িক লক্ষ্য। তার মন্তব্য, নিউ ইয়র্ক থেকে সফলভাবে সিডনি যাওয়া এভিয়েশন শিল্পের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এক ষংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক থেকে সিডনিতে বিরতিহীন উড়োজাহাজ নিয়ে যেতে পারা প্রথম বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা আমরাই।’
পরীক্ষামূলক ফ্লাইটগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখে যদি মনে হয়, দীর্ঘতম বিরতিহীন ফ্লাইট যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হবে না তাহলে ২০২২ অথবা ২০২৩ সালে এটি চালু হওয়ার কথা। সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেন থেকে নিউ ইয়ক ও লন্ডনে এগুলো চলাচল করবে। এর ফলে যাত্রীদের মোট ভ্রমণ সময়ের মধ্যে চার ঘণ্টা সাশ্রয় হবে।
* ডিহাইড্রেশন: উড়োজাহাজের কেবিনে সাধারণত বাতাসের আর্দ্রতা থাকে ২০ শতাংশ। অর্থাৎ সাহারা মরুভূমির চেয়ে শুকনো। কফি কিংবা অ্যালকোহল পান করলে তাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ১০ ঘণ্টার ফ্লাইটে পুরুষরা দুই লিটার পানি ও নারীরা ১ দশমিক ৬ লিটার পানি নির্গমন করতে পারেন। অ্যালকোহল এড়ালে শরীরে জল অবশিষ্ট থাকবে।
* সংক্রমণ: অন্যান্য সময়ের চেয়ে উড়োজাহাজে ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা ১০০ গুণ বেশি! আর্দ্রতা পরিবেশের কারণে মানুষ সহজে সংক্রমিত হয়। অপরিচিতদের সঙ্গে ২০ ঘণ্টার মতো থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি।
* শিরা ও রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা: দীর্ঘ ভ্রমণে রক্তপ্রবাহ ধীরগতির হয়ে থাকে। এ কারণে আকাশপথে বেশিক্ষণ থাকলে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তাই যাত্রীদের নিয়মিত কেবিনে হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়।
* বিকিরণ: আকাশপথে ঘন ঘন চলাচলের কারণে পাইলট ও কেবিন ক্রুরা উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের মধ্যে থাকেন। এ কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়।
* ডায়রিয়া: বাতাসের চাপ শরীরে গ্যাস বৃদ্ধি করতে পারে। এ কারণে পেট ফুলে যাওয়া, ডায়রিয়া ও অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দেয়।
* মাথা ঘোরা: অক্সিজেনের ঘাটতির কারণে সামান্য হালকা মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা ও হায়পোক্সিয়া দেখা দিতে পারে।
সূত্র: ডেইলি মেইল