প্রথমবার আকাশে উড়লো যমজ ইঞ্জিনের বিমান

বোয়িংয়ের যমজ ইঞ্জিনের উড়োজাহাজবিশ্বের বৃহত্তম যমজ ইঞ্জিন যুক্ত ৭৭৭এক্স উড়োজাহাজের প্রথম পরীক্ষামূলক ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করলো আমেরিকান বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বোয়িং। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের সিয়াটল শহরের কাছাকাছি ফ্লাইটটি উড্ডয়নের পর চার ঘণ্টা উড়েছে।

গত কয়েকদিন দু’বার ৭৭৭এক্স উড়োজাহাজের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনার চেষ্টা করলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল হয়েছিল।

আগামী বছর থেকে দুবাই ভিত্তিক বিমান সংস্থা এমিরেটস যাত্রীসেবায় ব্যবহার করবে ৭৭৭এক্স। তবে তার আগে এই আকাশযানের আরও পরীক্ষামূলক ফ্লাইট প্রয়োজন বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বানানো বিমানটি ২৫২ ফুট দীর্ঘ। ২০২০ সালেই এটি ফ্লাইট পরিচালনায় কাজে লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তা পিছিয়ে গেছে।
বোয়িংয়ের সফল ৭৭৭ মিনি-জাম্বোর বৃহৎ ও আরও বেশি কার্যকরি সংস্করণ ৭৭৭এক্স। এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁকানো ডানা ও বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ইঞ্জিন। 

নতুন উড়োজাহাজটি এয়ারবাস এ৩৫০-১০০০-এর সঙ্গে পাল্লা দেবে বলে আশা করছে বোয়িং। এয়ারবাসের বিমানটিতে আছে ৩৬০টি আসন।

৭৭৭এক্স বিপণন পরিচালক ওয়েন্ডি সোওয়ার্স বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা কতটা দারুণ কাজ করতে পারি এই উড়োজাহাজ সেটাই তুলে ধরবে।’

বোয়িং কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে ৩০৯টি ৭৭৭এক্স বিমান বিক্রি করা হয়েছে। এগুলোর প্রতিটির মূল্য ৪৪ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। অর্থাৎ ৩ হাজার ৭৫১ কোটি ১১ লাখ ৭৮ হাজার টাকারও বেশি।

বোয়িংয়ের যমজ ইঞ্জিনের উড়োজাহাজগত দুই বছরে দুটি ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়ে ৩৪৬ জন নিহত হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ফেরানোর প্রচেষ্টা হিসেবে ৭৭৭এক্স এনেছে বোয়িং।
পাঁচ মাসের ব্যবধানে ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ দুটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর থেকে সংকটে রয়েছে বোয়িং। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের ১৩ মিনিট পর লায়ন এয়ারের একটি ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৮৯ জনের প্রাণহানি হয়। ইন্দোনেশিয়ার এই বাজেট এয়ারলাইনসের দাবি– যান্ত্রিক ত্রুটি, দুর্বল ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম ও অপরিকল্পিত নকশা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।

এরপর ২০১৯ সালের ১০ মার্চ ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ৭৩৭ ম্যাক্স বিধ্বস্তের ঘটনায় ১৫৭ জন নিহত হয়। দুটি দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৬। এরপর মডেল নিয়ে তদন্ত করতে যাত্রীসেবা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স। তাই উড়োজাহাজগুলো মাটিতেই পড়ে আছে।

বোয়িংয়ের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বিমান ছিল ৭৩৭ ম্যাক্স। কিন্তু এসব উড়োজাহাজ যাত্রীসেবায় তড়িঘড়ি পৌঁছে দিতে নিরাপত্তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগে একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে বোয়িং। বিমানটি ফ্লাইট কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার অনুমোদন পেতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না প্রতিষ্ঠানটি। মাটিতে থমকে থাকা এসব আকাশযানের কারণে তাদের লোকসান ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

সূত্র: বিবিসি