ইতিহাসে প্রথমবার একসঙ্গে বাণিজ্যিক বিমান চালানো মা-মেয়ে

ওয়েন্ডি রেক্সন ও কেলি রেক্সনএভিয়েশন শিল্পের অন্যরকম এক ইতিহাস। ডেল্টা বোয়িং ৭৫৭ ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন মা ও মেয়ে। ওয়েন্ডি রেক্সন ছিলেন উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন, তার মেয়ে কেলি রেক্সন ফার্স্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইতিহাসে প্রথম একসঙ্গে বাণিজ্যিক বিমান চালানো মা-মেয়ে তারাই।

রেক্সন পরিবারের অনেকে বিমানচালনায় যুক্ত আছে। ওয়েন্ডি রেক্সন ও তার দুই মেয়ে পাইলট। ওয়েন্ডির স্বামী আমেরিকান এয়ারলাইনসের পাইলট হিসেবে কাজ করেন।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে কেলি বলেন, ‘আমরা ক্যাপ্টেন মা-বাবার টুপি পরে দৌড়াতাম। ছোটদের মতো মজা করতাম এবং তাদের সঙ্গে বেড়াতে যেতাম। পারিবারিক সূত্রে বিমানচালনায় যুক্ত হয়েছি আমরা দুই বোন। ১৬ বছর বয়স থেকে বিমান চালাই আমি। ছোটবোনের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে আনন্দ পেতাম। সে ছিল আমার প্রথম শিক্ষার্থী।’

ডেল্টা এয়ার লাইনসের এই উড়োজাহাজ প্রথমবার একসঙ্গে চালিয়েছেন ওয়েন্ডি রেক্সন ও কেলি রেক্সননিউ ইয়র্কের জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমবার একসঙ্গে একটি উড়োজাহাজ চালিয়েছেন ওয়েন্ডি ও কেলি। সেই যাত্রা ছিল ঘটনাবহুল। কারণ তারা ককপিটে ধোয়ার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অপ্রত্যাশিত জটিলতা সত্ত্বেও মা-মেয়ে নিরাপদে লস অ্যাঞ্জেলেসে অবতরণ করতে সক্ষম হয়।

সেদিন প্রথমবার পাশ থেকে মেয়েকে জরুরি অবতরণের দায়িত্ব সামলাতে দেখেছেন ওয়েন্ডি। পুরনো স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, সে চমৎকারভাবে সব সামলেছে। এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি ছিল। প্রশিক্ষিত হওয়ার সুবাদে এবং যোগ্যতা থাকায় কাজটা তার জন্য সহজ হয়েছিল।’

এভিয়েশনে ওয়েন্ডি ও কেলি রেক্সন আগামী প্রজন্মের রোল মডেল হয়ে উঠেছেন। যদিও হতবাক করার মতো ব্যাপার হলো, অনেক তরুণী জানে না পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। অবশ্য বৃহত্তর বিমান সংস্থাগুলো অল্পবয়সী মেয়েদের বৈমানিক হওয়ার কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পর্যটন শিল্পের অন্যান্য খাতের মতো এভিয়েশনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় পুরুষের আধিপত্য। বিশেষ করে বিমানচালনায় তা স্পষ্ট। অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক সেন্টার ফর এভিয়েশনের (সিএপিএ) তথ্যানুযায়ী, গত বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যিক বৈমানিকের মধ্যে মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ ছিল নারী, অর্থাৎ ৬ হাজার ৯৯৪ জন নারীর পেশা বিমানচালনা।

রেক্সন পরিবারআশার কথা হলো, বৃহত্তর বিমান সংস্থাগুলো ককপিটে নারীদের আনার প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। ফলে গত একদশকে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালানো নারী বৈমানিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ শতাংশ।

আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানায়, আমেরিকান এয়ারলাইনসের ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পাইলট নারী। ডেল্টা এয়ার লাইনসে তা ৫ শতাংশ। আর ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের বিমানচালনায় নিয়োজিতদের ৭ শতাংশ নারী।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির দাবি, ভারতের আটটি বৃহত্তর বিমান সংস্থার অন্তত ১০ শতাংশ পাইলট নারী।

তরুণীদের পাইলট হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে এবং বিমানের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ‘আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছেন নারীরা’ শীর্ষক প্রকল্প চালাচ্ছে ডেল্টা এয়ার লাইনস। গত বছরের ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক গার্লস ইন এভিয়েশন দিবস উপলক্ষে ১২০ কিশোরীকে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে নিয়ে যায় এই সংস্থা। ওই ফ্লাইটের কেবিন ক্রু থেকে শুরু করে পাইলট, গেট এজেন্টসহ সবাই ছিলেন নারী।