ট্রাভেলগ

ফেনীতে শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লাভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামে ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়াই করতে বাঁশের কেল্লা বানিয়েছিলেন তিতুমীর। ইতিহাসের পাতায় লেখা তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার কথা সবাই জানে। তবে ভ্রমণপ্রেমীদের অনেকের অজানা, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার শুভপুরে পুরো বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে একটি বাঁশের কেল্লা! এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র। শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা হিসেবে এর পরিচিতি আছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার সময়ের ত্রিপুরার রাজা শমসের গাজীর নামে রিসোর্টটির নামকরণ হয়।

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা যেন নিবিড় পল্লীতে স্বপ্নের মতো নান্দনিক নির্মাণশৈলী। ঘরোয়া পরিবেশে থাকা-খাওয়া বা অবসরে ঘুরে বেড়ানো অথবা ছুটি কাটানোর জন্য এটি জুতসই। এখানে যেমন পিকনিক আয়োজন করা যায়, তেমনই বারবিকিউ পার্টি করার সুয়োগ রয়েছে। এছাড়া আছে পাঠকক্ষ, মেহমানখানা ও চা কর্নার।

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লাপ্রায় ৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লায় ঢুকতেই চোখে পড়বে ‘ঐকতান’ নামের একটি ঢোলক, তবলা, হারমোনি ও একতারা সংবলিত ভাস্কর্য। ভেতরেও বাংলার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ রাখা হয়েছে। সাহিত্য আড্ডা কিংবা যেকোনও মুক্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য রিসোর্টের বাইরে রয়েছে শৈল্পিক আবহ। বাগানের পাশের খোলা আঙিনার ধারে বাঁশের মাচায় পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি ঘরের ছোঁয়া মিলবে।

রিসোর্টের ফলগাছের বাগানে রয়েছে বসার ছোট ছোট বেঞ্চ। রিসোর্ট ঘুরে ক্লান্তি এলে বসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া যাবে। অন্যপাশে লেকের পানিতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে আসন পাতা নৌকা। বৈঠা দিয়ে এটি চালাতে হয়।

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লাপর্যটন কেন্দ্রটি থাইল্যান্ড ও জাপানের বিভিন্ন শৈল্পিক রেস্টহাউসের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। এর নকশা করেছেন কানাডার লুই ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য প্রকৌশলী সুরাননা। এশিয়া অঞ্চলের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেই তিনি এটি ডিজাইন করেছেন।

রিসোর্টটি তৈরির জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুর ও পার্বত্য এলাকা থেকে বিভিন্ন ধরনের বাঁশ সংগ্রহ করা হয়। বড় আকারের বাঁশগুলো মধুপুর আর ছোট আকৃতির বাঁশ (মুলি বাঁশ) খাগড়াছড়ির পার্বত্য অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল।

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লাবাঁশের কেল্লায় ছুটির দিনে একসঙ্গে প্রায় ২০০-৩০০ ভ্রমণপ্রেমী ঘুরতে পারবেন। পারিবারিক আবহে কাটবে দিনরাত। গরমেও আরাম-আয়েশে থাকা যাবে। সবসময় শীতল থাকা পাঁচ কক্ষের রিসোর্টটির সিঙ্গেল বেডের ভাড়া ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আর ডাবল বেড ৭০০০ টাকা। রিসোর্টের ভেতরে প্রবেশে অনাবাসিকদের খরচ হবে মাত্র ২০ টাকা। পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে ঘরোয়া পরিবেশের ক্যান্টিন।

শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লায় খরগোশযেভাবে যাবেন
দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে সড়ক পথে গিয়ে বারইয়ারহাট নামতে হবে। এরপর রামগড় রোড দিয়ে করেরহাট বাজার পেরিয়ে শুভপুর বাজারে গেলে সোজা পূর্ব দিকে একটি সরু সড়ক দেখা যাবে। সেটি দিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক পর ‘শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্টস’। যে কেউ বারইয়ারহাট থেকে সিএনজি অথবা অটোরিকশা করে সেখানে যেতে পারেস। এছাড়া ফেনী শহর থেকে ছাগলনাইয়া হয়ে শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লায় যাওয়া যায়।

ছবি: লেখক