গত এক সপ্তাহে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, গুলশান, মতিঝিল থানার পাশের বা উল্টোদিকের রাস্তার ১২টি ঘটনায় মোটরসাইকেল থেকে ব্যাগ টান দেওয়ার চেষ্টা বা ঘটনা বাংলা ট্রিবিউনের চোখে ধরা পড়েছে। তাদের কেউ ল্যাপটপ খুইয়েছেন, কেউ হারিয়েছেন সামান্য টাকাসহ বড় হ্যান্ডব্যাগ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশের কাছে গিয়ে জিনিস ফেরত পাবেন, এমন নজির তাদের জানা না থাকায় এবং সময় নষ্ট করে কেবল সাধারণ ডায়েরিতে কী কী খোয়া গেছে, তা লিখতে চান না বলে অভিযোগ করাও হয়ে ওঠে না।
রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের অফিস থেকে শুরু করে আইডিবি ভবন পর্যন্ত রাস্তায় প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেলে করে ব্যাগ টান দেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। শেরেবাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে রোকেয়া স্মরণিতে ওঠার মুখে বিজয় স্মরণীর দিকে থেকে আসা রিকশাগুলোর ব্যাগে টান পড়ে। আর আইডিবি ভবনের দিকে যেতে একটু অসতর্ক হয়ে গাড়ির কাচ নামিয়ে ফোনে কথা বললে টান পড়ে টেলিফোনে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো!
মোহম্মদপুর থানার পেছনের রাস্তায়, পল্টন থানার উল্টোদিকের রাস্তায় অহরই ঘটছে দিনেদুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এমনকি গতবছর ডিসেম্বরে পল্টন থানার উল্টোদিকের রাস্তায় গাড়ির ভেতরে বসা নারীর কান থেকে সোনার মাঝারি সাইজের দুল ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন ছিনতাইকারীরা।
রাজধানীর ফার্মগেটে তেজগাঁও থানার উল্টোপাশেই চলছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এজন্য বাস-সিএনজি যাত্রীদের অসতর্ক থাকাকে দায়ী করার চেষ্টা হলেও পুলিশের চোখের সামনেই ঘটে যাচ্ছে এসব ছিনতাই। কাওরানবাজার থেকে ফার্মগেটের দিকে যেতে দ্বিতীয় ওভারব্রিজ থেকে তৃতীয় ওভারব্রিজের মাঝের রাস্তাটুকুতে গাড়ি ধীর গতি হলেই বিপত্তি। হয় সিএনজি কেটে ফোন নেওয়া হয়, নাহলে বাসের সিটে বসে কথা বলতে থাকা যাত্রীর কান থেকে মোবাইলে হাওয়া। কখনও কখনও সারাদিনের ক্লান্তিতে আরেকটু অসতর্ক হয়ে ব্যাগটা কাছাকাছি পেলে সেটাও নিয়ে যায়। পাশের বাসের বা গাড়ির যাত্রীরা মুহূর্তে বুঝে উঠতে-উঠতে ছিনতাইকারী অভ্যস্ত পায়ে ভিড় ঠেলে হাওয়া।
আরও পড়ুন: রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সুইফটকেই দায়ী করলো তদন্ত কমিটি
পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজধানীতে গত এপ্রিলের প্রথমার্ধে বিভিন্ন থানায় ছিনতাই ও দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে ৫৭টি। তবে মামলার বিপরীতে উল্লেখযোগ্য কোনও আসামি কিংবা মালামাল উদ্ধার হয়নি বললেই চলে। পুলিশের নথিপত্রে ছিনতাইয়ের যেসব ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, তা প্রকৃত চিত্রের খণ্ডাংশ মাত্র। রাজধানীর ৪৯টি থানার ১৩৫টি স্পটে ছিনতাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যার বেশিরভাগই থানার আশেপাশের রাস্তায়।পুলিশ স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারলেও ছিনতাই ঠেকাতে পারছে না।
এরপরও থানার সামনেই এ ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা কেন ঘটছে প্রশ্নের জবাবে মিরপুর থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূঁইয়া মাহবুব হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুব বেশি ঘটছে এমন নয়। এই এলাকায় আমাদের টহলেরও কোনও ঘাটতি নেই। প্রতিবেদক নিজেই শিকার হয়েছেন জানানো হলে এবং গত এক সপ্তাহে আরও দু’টি ঘটনার উদাহরণ টানা হলে, তিনি সুর পাল্টে বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা টহল বাড়িয়ে দেব।
তেজগাঁও মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ফার্মগেট খুব জনবহুল এবং ব্যস্ত এলাকা। যাত্রী বা পথচারীদেরও একটু সতর্ক থাকা জরুরি।এই এলাকায় রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ি থেকে টান দেওয়া মোবাইলে যারা নেন, তারা নিশ্চয় হাওয়া হয়ে যান না, এলাকাতেই থাকেন—প্রশ্নের জবাবে তিনি হেসে বলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চয় খোঁজার চেষ্টা করি।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
/এমএনএইচ/আপ-এজে