ঋণখেলাপি মামলা

ফের সময় পেলেন সাঈদ ইস্কান্দরের স্ত্রী

আইন-আদালতড্যান্ডি ডায়িংয়ের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা ৪৫ কোটি টাকা ঋণখেলাপি মামলায় আরও সময় পেয়েছেন বিবাদী। তার পক্ষে এক আইনজীবী বিচারকের প্রতি অনাস্থা দিয়ে শুনানির জন্য আবারও সময় পান। হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য সাতদিনের সময় দিয়ে আগামী ২১ জুলাই তারিখ ধার্য করেছেন বিচারক। এ বিবাদী হলেন,বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দরের স্ত্রী বেগম নাসরিন আহমেদ।
মঙ্গলবার ঢাকার ১ নম্বর অর্থঋণ আদালতে এ মামলার বিচার্য বিষয়কে (ইস্যু গঠন) চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে বলে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতুবি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী মো.আসাদুজ্জামান।
এ বিবাদীর সঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়াও একই কারণ দেখিয়ে সময় চান। আবেদনগুলো নাকচ করে বিকেল ৪টায় বাদীর অবশিষ্ট জবানবন্দি নেওয়ার সময় রাখেন ঢাকার ১ নম্বর অর্থঋণ আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস।

বিকেলে আইনজীবী সানাউল্লাহ হাইকোর্টের আদেশের সত্যায়িত কপি জমা দেওয়ার জন্য সময় চেয়ে বলেন, অন্তত কয়েকদিনের হলেও সময় প্রয়োজন।

এ সময় বিচারক হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের জন্য সাতদিনের সময় দিয়ে আগামী ২১ জুলাই তারিখ ধার্য করেন।

বিচারক বলেন, সেদিন রিটের আদেশ দাখিল না করলে বাদীর অবশিষ্ট বক্তব্য শুনবো।

বাদী সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন,এর আগে ৩ এপ্রিল বাদীর আংশিক জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়ার পর বিবাদী খালেদা জিয়াসহ অপর বিবাদীরা তিনটি তারিখে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতুবি চেয়ে সময় নেন।মঙ্গলবারসহ চারবার সময় নিলেন তারা।

এ মামলার বিচার্য বিষয়কে (ইস্যু গঠন)চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে বলে খালেদার পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতুবি চেয়ে বারবার আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। 

গত ৩ এপ্রিল এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ১৫ বিবাদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।সেদিন মামলার বাদী সোনালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক  নজরুল ইসলাম আদালতে আংশিক সাক্ষ্য দেন।তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৭ এপ্রিল, ১১ মে, ১৯ জুন দিন ধার্য করেন বিচারক।

এ মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়,আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ায় ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক অংশীদারিত্ব মামলায় তার মা খালেদা জিয়া, স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে বিবাদী করার জন্য ২০১৫ সালের ৮ মার্চ আদালতে আবেদন করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ ঢাকার অর্থঋণ আদালত-১ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক রোকসান আরা হ্যাপী এ মামলায় তাদের বিবাদী করেন।

একই বছরের ২৪ জানুয়ারি আরাফাত রহমান কোকো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান।

এ মামলায় অন্য বিবাদীরা হলেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার মামা প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের ছেলে শামস ইস্কান্দার ও সাফিন ইস্কান্দার, মেয়ে সুমাইয়া ইস্কান্দার ও স্ত্রী বেগম নাসরিন আহমেদ,ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন (অন্য মামলায় বর্তমানে কারাগারে),মামুনের স্ত্রী শাহীনা ইয়াসমিন,কাজী গালিব আহমেদ,মিসেস শামসুন নাহার ও মাসুদ হাসান।

মামলার আরজিতে বলা হয়,১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিবাদীরা ড্যান্ডি ডায়িংয়ের অনুকূলে সোনালী ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওই বছরের ৯ মে সোনালী ব্যাংক ঋণ মঞ্জুর করে।

২০০১ সালের ১৬ অক্টোবর বিবাদীদের আবেদনক্রমে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তাদের সুদ মওকুফ করে। পরবর্তীতে বিবাদীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক আবারও ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করে দেয়।কিন্তু বিবাদীরা ঋণ পরিশোধ না করে বারবার কালক্ষেপণ করতে থাকেন।

২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য বিবাদীদের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হলেও তারা কোনও ঋণ পরিশোধ করেননি।

ফলে, ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সোনালী ব্যাংকের সাবেক স্থানীয় শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে উপমহাব্যবস্থাপক) নজরুল ইসলাম।

২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ ১৫ বিবাদীর বিরুদ্ধে ইস্যু গঠন করেন বিচারক।

/টি/এবি/আপ-এনএস/