জেএমবি’র নতুন আমির সালাউদ্দিন, নব্য জেএমবি’র মাহফুজ

 

জঙ্গি সালাউদ্দিনজামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও নব্য জেএমবির নেতৃত্বে রয়েছে দুর্ধর্ষ দুই জঙ্গি। এর মধ্যে জেএমবি’র মূল গ্রুপের নেতৃত্বে আছে সালাউদ্দিন সালেহীন (৩৮)। আর সোহেল মাহফুজ (৩০) আছে নব্য জেএমবি’র নেতৃত্বে। তবে তারা কেউ দেশে নেই। বাইরে বসেই তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এসব তথ্য জানিয়েছে।
সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক অভিযানগুলোতে জেএমবি’র এই দুই গ্রুপের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই নিহত হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। তবে সালাউদ্দিন ও মাহফুজ এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। গোয়েন্দারা জানান, তারা দু’জনেই পালিয়ে ভারত গিয়েছে। জেএমবি’র মূল গ্রুপটি দুই-তিন মাস আগে সালাউদ্দিনকে আমির ঘোষণা করে। সালাউদ্দিনের দাদা পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন। তিনি তাবলীগে এসে বাংলাদেশে বিয়ে করেন। এরপর বাংলাদেশেই থেকে যান। অপরদিকে নব্য জেএমবি’ও সোহেল মাহফুজকে আমির হিসেবে গ্রহণ করেছে। সে তামীম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিল।
২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহ আদালতে নেওয়ার পথে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা সালাউদ্দিন সালেহীনসহ তিন জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। অপর দুই জঙ্গি হলো, বোমা মিজান ও হাফেজ মাহমুদ। এরপর থেকে এই গ্রুপটি ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। এক সময়ের জেএমবির শূরাসদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন বর্তমানে আমিরের দায়িত্ব পালন করছে।
সিটিটিসি জানায়, জেএমবির মূল গ্রুপটি আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। নব্য জেএমবির হামলা-নাশকতায় তারা পেছনে পড়েছে। মূল গ্রুপের সঙ্গে মতাদর্শে না মেলায় নব্য জেএমবি নিজেরাই তামিম চৌধুরীসহ দুই-তিনজনের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়। সম্প্রতি নারাণগঞ্জে তামিম চৌধুরি পুলিশের অভিযানে নিহত হওয়ার পর সোহেল মাহফুজ নব্য জেএমবির দায়িত্ব পায়। গুলশান হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড সোহেলই সরবরাহ করেছিল।
সূত্রটি আরও জানায়, ‘জেএমবি বর্তমানে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। সালাহউদ্দিন নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠছে। তারা নাশকতার পরিকল্পনা করছে। এই গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।’
বর্তমানে জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়ে গোয়েন্দারা বলেন, ‘জঙ্গিরা মূলত চার কারণে হামলা থেকে বিরত রয়েছে। প্রথমত, তারা বুঝে গেছে যে তাদের নাশকতায় মানুষের সমর্থন নেই। দ্বিতীয়ত, গত ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গিদের কিছু ছবি প্রকাশ করায় তারা চিহ্নিত হয়ে যায়। তৃতীয়ত, কিছু জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ব্যাপক অভিযানে তারা হামলার সুযোগ পাচ্ছে না।’
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এখন হামলা করার মতো প্রস্তুতি নেই। এখন নাশকতা করতে হলে নতুন করে তাদের সদস্য সংগ্রহ করতে হবে, অস্ত্র যোগান দিতে হবে এবং বিস্ফোরক বানাতে হবে।’ বর্তমানে জেএমবি ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহ করছে বলেও জানান তিনি।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে একযোগে বোমা ফাটিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয় জেএমবি। এরপর শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাইসহ শীর্ষ নেতারা ধরা পড়লে এবং তাদের ফাঁসি হলে সংগঠনটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পরে বিভিন্ন পর্যায়ে সংগঠনটি ভিন্ন ভিন্ন নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
জেএমবি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির শায়খ আবদুর রহমানসহ ছয় শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মাওলানা সাইদুর রহমান এর আমির হন। ২০১০ সালে গ্রেফতার হন মাওলানা সাইদুর। এরপরও তিনি কারাগার থেকে কর্মীদের নির্দেশনা দিতে থাকেন। একই সময়ে গ্রেফতার হন জেএমবি নেতা ফাহিম। কয়েক মাস জেল খাটার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে নিজেকে জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে ঘোষণা দেন ফাহিম। তাকেও কয়েক মাস আগে রাজধানীর উত্তরা থেকে সাত সহযোগীসহ গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকে সালাউদ্দিন আমিরের দায়িত্ব পালন করছে।
/এআরআর/এআরএল/