আকতার জাহানের ভিসেরায় হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও ঘুমের ওষুধ

 

 

আকতার জাহানরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির ভিসেরা পরীক্ষায় হাইড্রোক্লোরিক এসিড ও ঘুমের ওষুধ পাওয়া গেছে। রবিবার তদন্তসংশ্লিষ্টরা বাংলা ট্রিবিউনকে  এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে তার ভিসেরা প্রতিবেদনটি হাতে এসেছে। উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের (এইচসিএল) কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

আকতার জাহান জলির লাশের সুরতহাল রিপোর্ট দেখে বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করেছিলেন চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্ত শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. এনামুল হক ওই বলেছেন, ‘সুরতহাল অনুযায়ী তার বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। ভিসেরা প্রতিবেদন তৈরির জন্য নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

সুরতহাল করার পর রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আমীর জাফর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’

দ্রুত এ মামলায় চার্জশিট হবে উল্লেখ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আকতার জাহানের ভিসেরা পরীক্ষায় উচ্চমাত্রার ঘুমের ওষুধ ও এইচসিএলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে তার সহকর্মী আতিকুর রহমান রাজার সংশ্লিষ্টতারও বেশকিছু প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। দ্রুত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া সম্ভব হবে।’

ভিসেরায় পাওয়া এইচসিএল এসিডের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই এসিড কেউ সেবন করলে সঙ্গে-সঙ্গে মুখগহ্বরের ভেতরের সব পুড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এই এসিড নিষিদ্ধ নয় কিন্তু বিক্রি বা ক্রয় সংরক্ষিত। চাইলেই কেউ এটি সংগ্রহ করতে পারবে না। কেউ আত্মহত্যায় এ ধরনের এসিডের ব্যবহার করে এটি কখনও শুনিনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে এই এসিড ব্যবহার হয়ে থাকে। এর উপস্থিতি টের পাওয়া কঠিন কিছু না। যে বোতলে এটি ছিল, সেটিতে একটু গন্ধ থাকবে। সে গন্ধ থেকেই এটি নিশ্চিত বোঝা যাবে।’

এদিকে গত ৩ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির মৃত্যুর ঘটনায় তার এক সহকর্মী আতিকুর রহমান রাজাকে আটক করে পুলিশ। নগরীর তালাইমারী এলাকায় নর্দান ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল আটক করে। দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদে রাজার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। পরে ৫ নভেম্বর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আল আমীন বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে আকতার জাহান জলির সহকর্মী আতিকুর রহমানকে প্রথমে আটক করে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্ররোচনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে জলির সঙ্গে রাজার প্রেমের সম্পর্ক ছিল, বিয়ের কথাও হয়েছিল। কিন্তু একপর্যায়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। রাজা চাইলে জলিকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারতেন বলেও আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন।’ 

গত ৯ সেপ্টেম্বর এই শিক্ষকের লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে তার জন্য নির্ধারিত আবসিক কক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘরের টেবিলে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যেখানে ‘আত্মহত্যার’ কথা জানিয়ে ‘কেউ দায়ী নয়’ বলা হলেও নিজের সন্তানের গলায় ‘ছুরি ধরার’ অভিযোগ আনা হয়েছে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে।

/ইউআই/এমএনএইচ/