হলি আর্টিজানে হামলার দুই পরিকল্পনাকারী নিহত!

 

বাশারুজ্জমানানচাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গত এপ্রিলে পরিচালিত ঈগল হান্টের সময় গুলশান হামলার দুই পরিকল্পনাকারী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। এই দুই জন হলো মোহাম্মদ বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান। গত ৯ জুলাই সেই শিবগঞ্জ থেকেই গ্রেফতার হওয়া নব্য জেএমবির আরেক শীর্ষ নেতা সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ সিটিটিসির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে বিশেষ অপরাধ সভায় ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে এই তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান। সভায় উপস্থিত থাকা কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করা হলে সিটিটিসির উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল মাহফুজ তাদের জানিয়েছে, শিবগঞ্জের অপারেশনে বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজান মারা গেছে। আমরাও এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি। শতভাগ নিশ্চিত হতে এই দুই জনের পরিবারের সঙ্গে নিহতদের কাছ থেকে সংরক্ষিত করা ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে দেখা হবে।’

গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ এলাকার মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনী শিবনগর গ্রামে অভিযান চালায় সিটিটিসি ইউনিট। দুই দিনের অভিযান শেষে সিটিটিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযানে চার জঙ্গি নিজেরাই আত্মঘাতী হয়ে মারা গেছে। ওই বাড়িতে আবু নামে এক জঙ্গি থাকতো। অভিযানের সময় সোয়াট সদস্যরা ওই বাসা থেকে এক নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করেন।

সিটিটিসি সূত্র জানায়, প্রথমে ধারণা করা হয়, আস্তানায় আবু নিহত হয়েছে। তবে বাকিদের কারও পরিচয় জানা যায়নি। গত ৯ জুলাই সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতারের পর প্রথম দফায় সাত দিন ও পরবর্তী সময়ে আরও ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সোহেল মাহফুজ জানায়, ওই আস্তানায় নিহতদের মধ্যে বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজানও রয়েছে।

গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় জড়িত যে পাঁচ জন পলাতক ছিল, তাদের মধ্যে এই দুই জনেরও নাম রয়েছে। বাকিদের মধ্যে অন্য একজন গ্রেফতার হওয়া সোহেল মাহফুজ। অন্য দু’জন হাদীসুর রহমান সাগর ও রাশেদ ওরফে র‌্যাশ এখনও পলাতক রয়েছে।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, নিহত বাশারুজ্জামানের বাবার নাম সিরাজ উদ্দিন। মায়ের নাম বানিসা বেগম। রাজশাহীর তানোর উপজেলার লালপুর এলাকায় তার বাড়ি। স্থানীয় স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর রাজশাহী নিউ গভ. কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। পরবর্তী সময়ে ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করে। ঢাকায় সে তেজগাঁও এলাকায় শ্বাশুরবাড়িতে থাকা অবস্থাতেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঘর ছাড়ে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় বাশারুজ্জামান গুলশান হামলার ছয় মাস আগেই ঘর ছাড়ে। নিহত আরেকজন মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান সম্পর্কে বিস্তারিত কোনও তথ্য জানা যায়নি।

গুলশান হামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, নিহত বাশারুজ্জামান ছিল গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারীদের একজন। সে এই হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বাশারুজ্জামান জড়িত। আর ছোট মিজান ছিল নব্য জেএমবির অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহকারীদের একজন। বড় মিজানের নির্দেশনায় এই ছোট মিজানই চাপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও গ্রেনেড ঢাকায় আনার কাজ করতো।

/এমএনএইচ/