মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামির বিরুদ্ধে ছাগল চুরির অভিযোগ

 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালমানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কক্সবাজারের মহেশখালীর ১৭ আসামির বিরুদ্ধে আনা ১২টি অভিযোগের মধ্যে একটিতে ছাগল চুরির পৃথক অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।  রবিবার বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ অভিযোগ আনা হয়। এ সময় অভিযোগ বিষয়ে  উভয়পক্ষের শুনানিতে অংশ নেয়। এরপর মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য ২২ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ১২টি অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত। এরপর আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

প্রসিকিউশনের বক্তব্যের পর আসামি মৌলভী আমজাদ আলীর আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য। সেখানে আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে ৬ নম্বর অভিযোগে একাত্তরে ছাগল চুরির অভিযোগ তুলেছে প্রসিকিউশন। তার বিরুদ্ধে এই মামলায় আর কোনও অভিযোগ নেই। তাই এই অভিযোগ থেকে আমার মক্কেলের অব্যাহতি চাই।’

এদিকে মামলার প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘ছাগল চুরির বিষয়টিও একটি অপরাধ। তবে মৌলভী আমজাদ আলীকে শুধু ৬ নম্বর অভিযোগেই নয়, তাকে গণহত্যার দায়ে আনা  ১২ নম্বর অভিযোগেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি হয়তো আসামি পক্ষের আইনজীবী লক্ষ করেননি।’

জানতে চাইলে প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'এ মামলার ১৭ আসামির বিরুদ্ধে আমরা ১২টি অভিযোগ দাখিল করেছি। এর মধ্যে ৬নং অভিযোগে আসামি আমজাদ আলী, সালামত উল্লাহ খান, মৌলভী মোহাম্মদ জাকায়া, মো. রশিদ মিঞা  ও মৌলভী রমিজ হাসানের বিরুদ্ধে একাত্তরে ৩টি ছাগল চুরে খাওয়ার দায়ে একটি অভিযোগ এনেছি। কিন্তু শুধু আমজাদ আলীর আইনজীবী অভিযোগটি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আপত্তি তুলেছেন। তাই ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন।  আদেশের দিন ধার্য করেছেন।’  

উল্লেখ্য, মামলায় আসামির সংখ্যা ১৭জন। তারা হলেন সালামত উল্লাহ খান, মৌলভী মোহাম্মাদ জকরিয়া শিকদার (৭৮), মো. রশিদ মিয়া বিএ (৮৩), অলি আহমদ (৫৮), মো. জালাল উদ্দিন (৬৩), মৌলভী নুরুল ইসলাম (৬১), মোহাম্মদ সাইফুল ওরফে সাবুল (৬৩), মমতাজ আহমদ (৬০), হাবিবুর রহমান (৭০), মৌলভী আমজাদ আলী (৭০), মৌলভী রমিজ হাসান, বাদশা মিয়া (৭৩), ওসমান গণি (৬১), আব্দুল শুক্কুর (৬৫), মো. জাকারিয়া (৫৮), মৌলভী জালাল (৭৫) ও আব্দুল আজিজ (৬৮)। 

এর আগে আসামি এসআই সামসুল হকের ঠিকানা না পাওয়ায় এবং আব্দুল মজিদ মাস্টার মারা যাওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়।

হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত ও দেশান্তরসহ মানবতাবিরোধী ১২টি অভিযোগ আনা হয়েছে এ আসামিদের বিরুদ্ধে।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মো. নূরুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১২ মে থেকে ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তদন্ত শেষ করেন।

প্রতিবেদনে ৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ঘটনা স্থলের খসড়া মানচিত্র, সূচি ও ঘটনাস্থলের স্থিরচিত্র দাখিল করা হবে প্রসিকিউশনে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে মোট ঘটনা ১৩টি। এর মধ্যে হত্যার ৯৪টি, নারী নির্যাতন অসংখ্য এবং লুটপাট ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা রয়েছে। মামলায় মোট ১২৬ জন সাক্ষী রয়েছেন।