শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ৩২ মিনিটে এসপি রাঙামাটির (ইংরেজিতে) ফেসবুক আইডি থেকে ওই দুই তরুণীর ছবি প্রকাশ করা হয়। তখন থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ছবিগুলো ফেসবুকে ছিল। সেখানে সর্বশেষ ২১টির মতো কমেন্টসও দেখা গিয়েছিল। সেখান থেকে এ ছবি নিয়ে অনেকেই নিজ নিজ ফেসবুক আইডিতে শেয়ার দিয়েছেন। এছাড়া, বিভিন্ন নেটওয়ার্কে ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। ছবির ক্যাপশনে দুই তরুণীর নাম, পরিচয় ও পিতামাতার নামও লেখা হয়েছে। তারা বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, কী করছেন তাও ক্যাপশনে লেখা হয়।
পুলিশ সুপারের প্রকাশ করা ছবির সঙ্গে আরও লেখা হয়েছে, ‘আজ সকাল ৯টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তারিকুল হাসান তাদের দেখতে যান। এ সময় কুশল বিনিময় করেন।’
ভুক্তভোগীর ছবি এভাবে প্রকাশ করা যায় কিনা- জানতে চাইলে এসপি বলেন, ‘তারা তো ভিকটিম না। তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা এখনও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে জানা যাবে আসলে কী ঘটেছিল। আমরা একটা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিয়েছি। সেটা আদালতকে জানিয়েছি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকলে মামলা হবে। পুলিশ তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। পুলিশ যদি নিতো তাহলে বিষয়টি অন্যরকম হতো। আমরা তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। তারা নিরাপদে আছে।’
যদি ধর্ষণের প্রমাণ মেলে তখন কী হবে প্রশ্নে পুলিশ সুপার নিরুত্তর থাকেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, ধর্ষণ ছাড়াও কোনও নারী যদি ইভটিজিং, লাঞ্ছিত, শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে ভিকটিম হয়ে থাকেন, তাহলে তাদের ছবি প্রকাশে আইনগতভাবে নিষেধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ওড়াছড়ি গ্রামে মারমা দুই বোন যৌন নিপীড়নের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। বড় বোনকে ধর্ষণ ও ছোট বোনকে যৌন নির্যাতন করা হয়। পরদিন তাদের রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে ১৫ ফব্রুয়ারি তাদের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তারা পুলিশ পাহারায় রয়েছেন। শুক্রবার এসপি ও জেলা প্রশাসক ওই বাড়িতেই দুই তরুণীকে দেখতে যান। সেখানেই ছবিগুলো তোলা হয়।
জেলার সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তার আইডি থেকে এভাবে দুই তরুণীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করা ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এসপি বলেন, ‘এটা হয়তো ভুলে করেছে। পরে কেউ কমেন্টস করায় তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এলিনা খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভিকটিমের ছবি প্রকাশ করা আইনগত নিষিদ্ধ। কেউ তা করলে আইনে তাদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। জেলার সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা এটা করেছেন, সুতরাং তার বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘এই (দুই মারমা তরুণীর) অভিযোগের পরই মামলা নেওয়া উচিত ছিল। মামলা না নিয়ে জিডি নেওয়া হলো কেন? ধর্ষণ হয়েছে কী হয়নি? তা মামলা নিয়েও তদন্ত করা যায়। এটা আমলযোগ্য অপরাধ, আমলে নিয়ে মামলা নেওয়ার কথা। রাঙামাটির পুলিশ তাও করেনি।’
পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া ও প্ল্যানিং বিভাগের উপমহাপরিদর্শক আব্দুল আলিম মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের ছবি ফেসবুকে দেওয়া ঠিক না। তিনি (এসপি) হয়তো সেটা জানতেন না। জানার পরে ছবি সরিয়ে ফেলেছেন।’