চার শিক্ষক গ্রেফতার

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পায়নি র‌্যাব

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে এখনও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পায়নি র‌্যাব। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কেবল অর্থের জন্যই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে বলে মনে করছে র‌্যাব, এজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই ব্যবহার করছে অপরাধীরা। এমনকি ‘ব্লাড ডোনেট’ এর নামে করা ফেসবুক গ্রুপ/পেজ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবার বিকালে কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এসব তথ্য জানান।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার গ্রেফতারকৃতরাএর আগে, সোমবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত র‌্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরখান ও গাজীপুর এলাকা থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চার শিক্ষক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপের অ্যাডমিনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোনও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মূলত অর্থের জন্যই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। গ্রেফতার পাঁচ ব্যক্তি হলো- হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই (২৯), তানভীর হোসেন (২৯), মো. সজীব মিয়া (২৬), মো. এনামুল হক (২৭) এবং মো. ইব্রাহিম (২১)। রাজধানীর উত্তরখানের কাচকুড়া ও গাজীপুরের বোগড়া বাইপাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

এদের মধ্যে তানভীর হোসেন ‍উত্তরার ক্যামব্রিজ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, আর মো. সজীব মিয়া একই স্কুলের হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক। এছাড়া মো. ইব্রাহিম এবং মো. এনামুল হক উত্তরখানের সৃজনশীল কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। অপরদিকে, হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার ফেসবুক আইডি ‘রকি ভাই’। প্রশ্নপত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে তার বেশ খ্যাতি আছে বলে জানায় র‌্যাব। সে গ্রুপের অ্যাডমিন। সে বিগত চার বছর ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। হাসান একেকটি পরীক্ষার শুরু হওয়ার দুই মাস আগে থেকেই ফেসবুক, হোয়াসটঅ্যাপ, ইমো’তে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার নম্বর আইডি দিয়ে প্রচারণা করতে শুরু করে।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘প্রথমে একটি গ্রুপ খুলে সেখানে এক্সক্লুসিভ সাজেশন পাওয়ার অফার দেয়। এরপর যারা রাজি থাকেন তারা সেই গ্রুপে যোগ দেয়। সদস্য হতে প্রত্যেকের দু’হাজার টাকা দিতে হয়। পরবর্তীতে প্রশ্ন কমন পড়া সাপেক্ষে বাকি টাকা পরিশোধ করতে হয়। কথিত রকি ভাই বিভিন্ন সাজেশন গ্রুপ খুলে Exclusive Suggestion দেওয়ার প্রস্তাবও দিত। ম্যাসেঞ্জারে, ইনবক্সে ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলা হতো। টাকা পাঠানোর পর রশিদের স্ক্রিনশর্ট দিলে তাদের গ্রুপের সদস্য করে নেওয়া হতো।’

এই চক্রটি বর্তমানে চলমান এসএসসি পরীক্ষার সব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে বলে স্বীকার করেছে বলে জানান র‌্যাবের মুখপাত্র। হাসান প্রতি বিষয়ের জন্য নতুন নতুন গ্রুপ খুলত। যেমন- গণিত পরীক্ষার জন্য ‘MOJJA’, ইংরেজি ২য় পরীক্ষার জন্য ‘ADDA’ এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলোর জন্য ‘Blood Donation-1’, B‘lood Donation-2’, ‘Blood Donation-3’ ইত্যাদি গ্রুপ খুলে প্রশ্ন ফাঁস করত। প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে গ্রুপের নাম পরিবর্তন করত এবং গ্রুপ থেকে মেম্বারদের পরিবর্তন করে ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রাপ্তি সাপেক্ষে নতুন সদস্য সংযুক্ত করত।

মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘গ্রেফতার চার শিক্ষকের কাছ থেকে হাসানুর রহমান ওরফে রকি ভাই প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করত। সেগুলো খুব কম সময়ের মধ্যে সমাধান করে রকি গ্রুপে শিক্ষার্থীদের পাঠিয়ে দিতো। প্রশ্ন ফাঁসে তিনটি স্তর কাজ করে। আমরা মূল স্তরটি গ্রেফতারে কাজ করছি। যেখানে থেকে প্রশ্নটি ফাঁস হয় আমরা তাদের খুঁজছি। আশা করি শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’

গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৮টি মোবাইল সেট ও ১টি ট্যাব উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের ভেতরে এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে র‌্যাব রাজধানী ঢাকা থেকে ৪ জন, খুলনা মহানগর থেকে ৯ জন, নাটোর তেকে ১০ জন, চট্টগ্রাম তেকে ৩ জন, কুষ্টিয়া থেকে ১ জন এবং বগুড়া থেকে ১ জনসহ সারাদেশে সর্বমোট ২৮ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।