পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক কারা কর্মকর্তার অপতৎপরতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবিদ আহমেদ লিটন নামে ওই কর্মকর্তা ডেপুটি জেলার হিসেবে কারা ইন্টিলিজেন্স ইউনিটে দায়িত্বরত আছেন। ১৩ এপ্রিল দেওয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি পয়লা বৈশাখের লাল-সাদা রঙের সঙ্গে শাঁখা-সিঁদুরের তুলনা করেছেন। ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে সূর্য-পূজারীদের কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ...’ আর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে তুলনা করেছেন শিরকের সঙ্গে। তার এই ফেসবুক স্ট্যাটাস অসংখ্য শেয়ার ও কপি করে শেয়ার দিয়েছেন অনেকে।
কারা সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সরকারি চাকরিতে থাকা কোনও কর্মকর্তা এমন বিদ্বেষমূলক স্ট্যাটাস দিতে পারেন না। আবিদ আহমেদ লিটন এই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনার পয়লা বৈশাখের উৎসবকে নিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তার এই কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারা অধিদফতরের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-মামুনের সই করা একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ’ শীর্ষক ওই নির্দেশনায় কারা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেসবুকে পোস্ট ও ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ২০১৬ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের নির্দেশিকা অনুসরণ করতে বলা হয়।
যোগাযোগ করা হলে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা হয়ে বৈশাখবিরোধী এমন কোনও পোস্ট কেউ দিতে পারে না। তার ফেসবুক আমরা ঘেঁটে দেখে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।’
পহেলা বৈশাখের আরেক অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আবিদ আহমেদ লিটন। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় মোটিফ হিসেবে পেঁচার ব্যবহারকে তিনি হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর বাহনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আবিদ লিখেছেন, শয়তান কৌশলে বাঙালি চেতনা পালনের নামে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের দিয়ে শিরক করাচ্ছে। যে কারণে তিনি সব মুসলিমকে তওবা করে সঠিক পথের পথিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জঙ্গিবাদ উসকে দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব পোস্টই কার্যকর ভূমিকা রাখে। সরকার যেখানে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছে, সেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষ করে কারা অধিদফতরের গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত কেউ এভাবে বলতে পারেন না। কারাগারে যেসব জঙ্গি রয়েছে, তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়াটা তো তার পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু নয়।
যোগাযোগ করা হলে আবিদ আহমেদ লিটন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তার ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানগুলো সঙ্গে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন আচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই বিষয়টি আমি তুলে ধরেছি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালন করলেও এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত।’ লিটন বলেন, ‘এতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে আমি পোস্টটি ডিলিট করে দিচ্ছি।’
এদিকে ইব্রাহিম খলিল নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) বৈশাখবিরোধী পোস্ট দিয়েছিলেন। পহেলা বৈশাখের বেশ কয়েকটি ছবি আপলোড করে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়েছিল তার ওই পোস্টে। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে খলিল তার পোস্টটি সরিয়ে নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পহেলা বৈশাখবিরোধী পোস্ট দিয়েছেন। ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা এসব পোস্টের স্ক্রিনশট রেখেছেন। সেগুলো দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন-
রুনীর পা বাঁচাতে লাগবে ৪ লাখ টাকা, খোঁজ নেননি বাসমালিক
রিজার্ভ চুরি: সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক