‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসড়কে  আইন লঙ্ঘনকারীদের সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিমের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই শিশু শিক্ষার্থীদের বার্তা অন্তরে ধারণ করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আর এই কারণে আমরা একটি বার্তা দিতে পেরেছি যে, ব্যক্তি যে শ্রেণি-পেশারই হোক, আইন লঙ্ঘন করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ শনিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখন থেকে এ বিষয়ে আইন প্রয়োগ আরও জোরদার করা হবে। আইন অমান্যকারীকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আইন না মানার প্রবণতা বেশি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে শতকরা ৯৮ জন লোক আইন মানেন। আর দুই জন মানে না। আর আমাদের দেশে ৯০ জন আইন মানে না। এ কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অনেক কষ্টসাধ্য ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ৪ হাজারেরও বেশি ট্রাফিক সদস্য দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করছেন। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

ট্রাফিক সপ্তাহের গত ৬ দিনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘ডিএমপিতে আইন অমান্য করার অভিযোগে ৫২ হাজার ৪১৭ টি মামলা করা হয়েছে। ১১ হাজার ৪০৫ জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ফিটনেস না থাকায় ৫ হাজার ৫৭২টি যানবাহন ডাম্পিং করা হয়েছে এবং ৩ কোটি টাকার বেশি জরিমানা আদায় করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত ২ বছরে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের দায়ে ৪৪ হাজার ৫৮৫ টি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বিকন লাইট ব্যবহারের দায়ে ৫ হাজার গাড়ির বিরুদ্ধে, উল্টোপথে চলাচলের দায়ে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬১ টি গাড়ির বিরুদ্ধে, স্টিকার ব্যবহারের দায়ে ১ হাজার ৪৭টি, কালো গ্লাস ব্যবহারের দায়ে ৬ হাজার ১৬২টি গাড়ি এবং ৪ লাখ মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে ১০ হাজারেরও বেশি মোটরসাইকেল ডাম্পিং করা হয়েছে।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমরা পুনরায় ভিডিও মামলা চালু করোছি।  ইতোমধ্যে ৯৯ হাজারেরও বেশি গাড়ির বিরুদ্ধে ভিডিও মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ভিডিও মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে। ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল রোধ করতে ডিএমপি নিজস্ব অর্থায়নে ৪ হাজার ৭৭টি মেটালিক বার স্থাপন করেছে। ট্রাফিক সচেতনতায় ৩ হাজার ৬৩৯টি বৈঠক করেছি।’ সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'সবাই আইন না মানলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। আসুন আমরা সবাই আইন মেনে চলি। অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করি। ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে যেখানে-সেখানে  রাস্তা পারাপার হলে এখন থেকে আমরা বিভিন্নভাবে ধরনের আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হবো। আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করুন।'

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশের সব মামলায় ইলেক্ট্রনিক প্রসিডিউর মেনটেইন করা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে অবৈধ লেনদেনের সুযোগ নেই। তারপরেও ঊর্ধ্বতনরা বিষয়টি খেয়াল রাখছেন।' বিভিন্ন অজুহাতে রাস্তা অবরোধ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'রাস্তা অবরোধ কোনও প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। যেকোনও বিষয়ে রাস্তা অবরোধ করার মানসিকতা পরিহার করে আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াই, ট্রাফিক শৃঙ্খলায় পুলিশকে সহায়তার হাত বাড়াই।'