প্রতারণার কমিশন ১০ পার্সেন্ট

দুই বাংলাদেশি ও দুই নাইজেরিয়াননাইজেরিয়ান প্রতারকচক্রকে প্রতারণায় সহযোগিতা করতো দুই বাংলাদেশি। কমিশন হিসেবে পেতো প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া টাকার ১০ পার্সেন্ট। বাকি টাকা যেতো নাইজেরিয়ান প্রতারক চক্রের পকেটে। এই দুই বাংলাদেশি ও নাইজেরিয়ান প্রতারক চক্রের দুই জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম।

অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

গ্রেফতার চার জন হলো- মো. শওকত আলী, মো. মহসিন শেখ এবং নাইজেরিয়ান আমা ফ্রেড ও টল হ্যানরি। তাদের ২০১৭ সালের অক্টোবরের একটি প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ওই মামলাটি তদন্ত করে এই চার জনকে মঙ্গলবার রাতে বসুন্ধরা এলাকা থেকে অর্গানাইজড ক্রাইম সিআইডি গ্রেফতার করে। এরমধ্যে দুই বাংলাদেশি সম্পর্কে ভাই। তাদের কাজ ছিল প্রতারণার টাকা লেনদেন করার জন্য নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা। এর জন্য শওকত আলী তার অ্যাকাউন্টগুলোতে যে পরিমাণ টাকা লেনদেন হতো তার ১০ ভাগ এবং মহসিন শেখ ৭ ভাগ টাকা পেতো।

সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশি একজন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় নাইজেরিয় ও বাংলাদেশি একটি প্রতারক চক্র। এই ঘটনায় বনানী থানায় ২০১৭ সালের অক্টোবরে মামলা হয়। পরে ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বসুন্ধরা ও খিলক্ষেত লেক সিটি এলাকা থেকে পাঁচ নাইজেরিয়ান ও দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে অর্গানাইজড ক্রাইম।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারক চক্রটি ধনী ব্যক্তিদের টার্গেট করে। টার্গেটের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে। পরবর্তীতে নাইজেরিয়ানরা নিজেদেরকে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান বলে পরিচয় দেয়। ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান নাগরিকদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলে। ভিকটিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরির মাধ্যমে বিশ্বস্ততা অর্জন করে। এরপর উপহার বা পুরস্কার দেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে তাদেরকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। নাইজেরিয়ান প্রতারক চক্রটি প্রতারণা করে আয় করা টাকা গ্রহণ করার জন্য স্বল্প শিক্ষিত সহজ-সরল বাংলাদেশি নাগরিকদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতো। আর এজন্য প্রতারক চক্রে কিছু বাংলাদেশিকে যুক্ত করে। যাদের কাজ ব্যাংক হিসাব নম্বর সংগ্রহ করা। সেটা তারা নিজের নামে বা সাধারণ মানুষের নাম ব্যবহার করে খুলতো। নাইজেরিয়ানদের কাছে অ্যাকাউন্ট নম্বর ও প্রতারণার টাকা পৌঁছে দিতো। প্রতিটি অ্যাক্যাউন্টে যত টাকা ঢুকতো তার ওপর ৫ ভাগ পেতো। ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীও ৫ ভাগ টাকা পেতো।  

নাইজেরিয়ান দুই জন প্রতারণার টাকা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস আইটেম (পোশাক ) ক্রয় করে নাইজেরিয়াতে পাঠিয়ে দিতো। এভাবে তারা কালো টাকা সাদা করার একটা উপায় বের করে নিয়েছিল।