সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুরো ইজতেমা ময়দান। ময়দানের চারপাশ ও ভেতরে বিপুল পরিমাণে পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। ময়দানে পড়ে থাকা অসংখ্য মালামাল সঠিক ব্যক্তিদের কাছে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ খোদ প্রশাসন। রবিবার (২ ডিসেম্বর) টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা যায়।
শনিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) রকিবুল হাসান বাদী হয়ে ২০-২৫ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-০১। তবে এই ঘটনায় এখনও কোনও আসামি গ্রেফতার হয়নি। এছাড়াও ওই সংঘর্ষে ইসমাইল মণ্ডল (৭০) নামে একজন নিহতের ঘটনায় এখনও কোনও মামলা দায়ের হয়নি।
পুলিশ বলছে, প্রতিপক্ষের হামলায় ইজতেমার ময়দানের ভেতরে ইসমাইল মণ্ডল নিহত হন। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে একটি মামলা করার কথা রয়েছে। এদিকে, ইসমাইল মণ্ডল নিহতের ঘটনায় শনিবার রাতেই টঙ্গী পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক রেজাউল করিম একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর-৯) দায়ের করেন।
ওসি এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওইদিন প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ইসমাইল মণ্ডলের স্বজনরা তার মরদেহ দাফন করার জন্য গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। দাফন শেষে তার ছেলে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
ইজতেমার ময়দানে সরেজমিন দেখা গেছে, গেটের বাইরে শত শত মুসল্লি দাঁড়িয়ে আছেন আর ভেতর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মুসল্লিদের সারিবদ্ধভাবে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। ভেতরে প্রবেশ করে মুসল্লিরা পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে নিজেদের মালামাল বুঝে নিচ্ছিলেন। এ সময় ইজতেমার ময়দানের ভেতরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে ভাঙচুর করা গাড়ি ও আগুনে পোড়া মোটরসাইকেল।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর দফতরের উপ-কমিশনার (ডিসি ক্রাইম) মো. শরীফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ময়দানের ভেতরে মুসল্লিদের যেসব মালামাল আছে সেগুলো দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির মাধ্যমে মালামাল দেওয়া হচ্ছে। এসব মালামাল নিতে মুসল্লিদের নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। এরপর মুসল্লিদের মালামাল দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তার ছেলে বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি মামলা করার কথা রয়েছে। সেটি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, সে কারণেও মামলা দায়ের হবে।’
মুসল্লি মো. সোহেল খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইজতেমায় অংশ নিতে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর এলাকা থেকে এসেছিলাম। গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা আহত হয়েছিলাম। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রশাসন সবাইকে ময়দান থেকে বের করে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের মাল-সামানা ময়দানেই ছিল। সেগুলো নিতে আজ (রবিবার) সকালে এসেছিলাম। মাল-সামানা বুঝে পেয়েছি, এখন বাড়ি যাবো।’
তিনি বলেন, মাল-সামানা নিতে হলে প্রথমে নিজেদের মাল-সামানার তালিকা দিতে হয়েছে, পরে ভেতরে গিয়ে নাম পরিচয় ও মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করে পরে মাল-সামানা নিয়ে এসেছি।
মুসল্লিদের অন্য একজন আবদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘গতকাল আমরা ময়দানের ভেতরে বসে জিকির করছিলাম। শনিবার সকাল ১১টার দিকে সাদপন্থিরা ময়দানের গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তখন আমরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে ছুটোছুটি করি। তারপরও আমরা হামলা থেকে বাঁচতে পারিনি। গতকাল সবাইকে ময়দান থেকে বের করে দিলেও আমাদের মালামাল ভেতরে ছিল। আজ (রবিবার)এগুলো নিতে এসেছিলাম। নাম-ঠিকানা মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দেশে শান্তি বিরাজ করুক। এ বিষয়টি সুরাহা করে তাবলিগ জামাতের তরিকা অনুযায়ী পুনরায় যাতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।’