নাইকো দুর্নীতি মামলা: এফবিআইয়ের অগ্রবর্তী দল ঢাকায়








নাইকোনাইকো দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই এবং কানাডার রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ- আরসিএমপি’র প্রতিনিধি দল আসার কথা রয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর বিশেষ জজ আদালতে তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা। একারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জানতে এরই মধ্যে চার সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ঢাকায় এসেছে। তারা গত শনিবার পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারের অস্থায়ী আদালত পরিদর্শন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘চার সদস্যের একটি দল ঢাকায় এসেছে। মূল সাক্ষীদের আসার কথা ১১ ডিসেম্বর। পরদিন ১২ ডিসেম্বর এ বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে।’ সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, এফবিআইয়ের অগ্রবর্তী দলের সদস্যরা ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছেন। ১২ ডিসেম্বর মূল সাক্ষীরাও ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে সাক্ষী দেওয়ার কথা রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানার কথা নয়। এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বপ্রাপ্তরা ভালো বলতে পারবেন। আমি তো মামলা করি। আমি তো তাদের বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’

গত ২২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, পূর্ব ছাতকের গ্যাস ফিল্ড নেওয়ার ব্যাপারে নাইকো যে ঘুষ প্রদান করে, সে নিয়ে কানাডার রয়েল মাউন্টেড পুলিশ ২০০৫ সালে তদন্ত শুরু করে এবং তারা তদন্তে প্রমাণ পায়- এই নাইকো তাদের দেশ (কানাডা) থেকে টাকা বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে পাঠায়। পরে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই থেকেও তদন্ত হয়। তিনি সেসময় আরও বলেন, ২০১৭ সালে আমি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম তারা তদন্ত করে যে তথ্য পেয়েছেন সেগুলো আমাদের কাছে পাঠানোর জন্য। তারা আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে মিউচ্যুয়াল অ্যাসিস্টেন্স এর আওতায় প্রতিবেদনগুলো পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদনগুলো প্রায় ৭/৮ পৃষ্ঠার। কানাডার রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে তার একটি প্রতিবেদন এবং এফবিআই এর বিশেষ প্রতিনিধিরা তদন্ত করে যা পেয়েছেন তারও একটি প্রতিবেদন আমাদেরকে পাঠিয়েছে।

মাহবুবে আলম আরও জানান, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ তে ওই প্রতিবেদনগুলো দাখিল করে একটি আবেদন করেছি যে, কানাডার রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের যারাই তদন্ত করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এর যারা তদন্ত করেছেন তারা যাতে এ দেশে এসে তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের স্বপক্ষে আদালতে বক্তব্য পেশ করতে পারেন- সে বিষয়ে আবেদন জানিয়েছি। আদালত আগামী ৯ ডিসেম্বর ওই আবেদনের ওপর শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।

নাইকো মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আগামী ৯ ডিসেম্বর শুনানি রয়েছে। আমরা শুনানি করবো। শুনানির পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের কারণে এফবিআই ও  আরসিএমপি প্রতিনিধিরা নির্বাচনের পরে আসতে চায়। তাদের সাক্ষ্য যাতে আসন্ন নির্বাচনে কোনও প্রভাব না ফেলে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারী কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তার কাছ থেকে বিস্তারিত শোনাটাই সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি।’

উল্লেখ্য, কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। এরপর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩  হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়। মামলাটি বর্তমানে বিশেষ জজ আদালত-৯-এ বিচারাধীন রয়েছে।