শিশু নিনাদ হত্যা মামলা: তদন্ত-পুনঃতদন্তেই পেরিয়ে গেলো একবছর

নিনাদতদন্ত ও পুনঃতদন্তের বৃত্তেই একবছর কেটে গেলো রাজধানীর খিলগাঁওয়ের শিশু নিনাদ হত্যা মামলার। দীর্ঘ একবছরেও মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আসতে পারেনি। গত একবছর ধরেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দেওয়া চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ আপত্তি দেওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুনঃতদন্তের দায়িত্ব পেলেও এখন পর্যন্ত পুনঃচার্জশিট দেয়নি তারা। মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত শিশুটির বাবা, বাদী স্বপন বেপারী। আর পিবিআই বলছে, পুনঃতদন্তের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

১৫ জুন (শনিবার) একবছর পূর্ণ হলো শিশু নিনাদ হত্যার। আজ থেকে ঠিক একবছর আগের (২০১৮) ১৫ জুন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ায় ৮ বছরের শিশু সাফওয়ান আল নিনাদকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দীর্ঘ প্রায় নয় মাস তদন্ত শেষে জহিরুল ইসলাম ওরফে লুড্ডু নামে একজনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১১ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান। কিন্তু চার্জশিটের বিরুদ্ধে গত ১৮ মার্চ আদালতে নারাজি দেন বাদী। এরপর ৩১ মার্চ নারাজি মঞ্জুর করে পিবিআইকে মামলাটির পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

এই প্রসঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবী নীলঞ্জনা রিফাত সুরভী বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তাকে যেসব তথ্য বাদী দিয়েছিলেন, সেগুলোর যথাযথ তদন্ত না করে মনগড়া একটি চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছেন তিনি। বাদী ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছেন। নারাজির দরখাস্ত শুনানি শেষে মঞ্জুর করে মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।’

জানতে চাইলে মামলার বাদী শিশু নিনাদের বাবা স্বপন বেপারী বলেন, ‘একবছর হয়ে গেলো। কিন্তু আমার সন্তান হত্যার বিচার পেলাম না। কয়েকজন মিলে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। কিন্তু মাত্র একজনকে আসামি করে গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে।’

মামলার বাদী আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে অনেক তথ্য ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো তদন্তের সময় আমলে নেননি তিনি।

স্বপন বেপারী বলেন, ‘অন্য আসামিদের বাঁচানো চেষ্টা করা হয়েছে। তাই ডিবির চার্জশিটে তাদের নাম আসেনি।’

পুনঃতদন্ত বিষয়ে  জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর হামিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নিনাদ হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত চলছে। এই মামলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের কাজ চলছে। নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই ভালো ফল পাওয়া যাবে।’

উল্লেখ্য, খিলগাঁওয়ের বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল সাফওয়ান আল নিনাদ। ২০১৮ সালের ১৫ জুন রাতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় শিশুটি। এর পরদিন (ঈদের দিন) দুপুরে বাড়ির পাশে বেকারির পণ্যবাহী একটি ভ্যানগাড়ির ভেতরে শিশুটির লাশ দেখতে পায় এলাকাবাসী। ওই দিনই অজ্ঞাতদের আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিনাদের বাবা স্বপন বেপারী। প্রথমে থানা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করলেও হত্যাকাণ্ডের কোনও ক্লু বের করতে পারেনি। পরে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গলায় পেঁচানো পলিথিনের সূত্র ধরে শুরু হয় রহস্য উদঘাটন। ঘটনার রাতে পাশের দোকান থেকে একই রকম পলিথিন নেন নিনাদের মায়ের মামা লুড্ডু। লুড্ডু ও তার বড় বোন ছালেহা বেগম সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনার জের ধরে শিশু নিনাদকে লুড্ডু হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সত্যতা মেলায় তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।এরপর চলতি বছরের ১১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।