রূপপুর বালিশকাণ্ডে ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ



সুপ্রিম কোর্ট

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দু’টি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন দু’টিতে রূপপুর বালিশকাণ্ডের ঘটনার পর ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকার গরমিল পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বাড়তি অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত আনারও সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এ ঘটনায় গণপূর্ত বিভাগের পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করেছে তদন্ত কমিটি। সোমবার (১৫ জুলাই) প্রতিবেদন দু’টি জমা হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন-২ অনুবিভাগ) মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের কমিটি এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

প্রতিবেদন দু’টি আগামী রবিবার (২১ জুলাই) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা হবে।

এর আগে, গত ২ জুলাই রূপপুর গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের করা দু’টি কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র বিশ্বস্ততার সঙ্গে (গুড ফেইথ) কেনা ও উত্তোলনের ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তাও জানতে চেয়েছে রুল জারি করেছিলেন আদালত।

এই ঘটনায় রিটকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্র কেনায় যাদের বিশ্বস্ততা দেখানোর কথা ছিল, তারা সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থ হওয়াটা কেন অবৈধ বলে বিবেচনা করা হবে না, এ মর্মে রুল দিয়েছেন আদালত। এছাড়া সরকার পক্ষকে বলেছেন, ২ সপ্তাহের মধ্যে তারা কী প্রতিবেদন নিয়ে আসবেন, তাও জমা দিতে। রিপোর্টের ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে তা জানাতে বলা হয়েছে।

রিটের বিবাদীরা হচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক।

প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি প্রকল্পের ১১০ ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক মূল্যে আসবাবপত্র কেনা ও ভবনে তোলার ঘটনা অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন দুদককে দেওয়া হবে। দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি প্রকল্পে ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা এবং ভবনে তোলার কাজে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ মে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।