নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগে প্রস্তুতি নেই

সড়ক পরিবহন আইননতুন ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর করার কথা বলা হলেও তা প্রয়োগে প্রস্তুতি নেই পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা এখনও এই আইনের ধারা ও শাস্তি সম্পর্কে জানেন না। তারা বলছেন, নতুন আইন পুরোপুরি প্রয়োগে অন্তত দুই সপ্তাহ সময়ের প্রয়োজন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, এই আইন বাস্তবায়নের আগে নিজেদের ও পথচারীদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

চলছে সচেতনতার কার্যক্রম

পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন আইন কার্যকরের নির্দেশনা তারা পেয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন  আইনে শাস্তি ও জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। তবে, আইনের কোন ধারা লঙ্ঘন করলে কত টাকা জরিমানা, কী শাস্তি রাখা হয়েছে, সেটি ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ঠিকমতো জানেন না। এজন্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের বিভিন্ন স্তরে নতুন আইন প্রসঙ্গে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা শুরু করা হয়েছে।

হাতে লেখা রিসিটে চলবে মামলা

ডিসেম্বর পর্যন্ত হাতে লিখে নতুন আইন অনুযায়ী মামলার কাজ চলবে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে ট্রাফিকের সার্ভার আপডেট হলে নতুন মেশিনের মাধ্যমে মামলা করা যাবে। মূলত মামলা দেওয়ার প্রক্রিয়ার ট্রাফিকের কাচে নেই বলে নতুন আইন বাস্তবায়নে সময় লাগছে।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সড়ক আইন কার্যকরে পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে, মামলা ও জরিমানার ক্ষেত্রে কিছু কাজ বাকি আছে। এতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এছাড়া নতুন আইন সম্পর্কে ট্রাফিক সদস্যদের প্রশিক্ষণ করার কাজ চলছে।’

নতুন আইন  সম্পর্কে জানেন না ট্রাফিক সদস্যরা

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সরেজমিনে রাজধানীর উত্তরা, বিমানবন্দর, বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণি, বাংলামোটর, শাহবাগ, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, সাতরাস্তা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন সচেতনতামূলক প্রচারণা চলছে। নতুন আইন অনুযায়ী কোনও মামলা বা শাস্তি হচ্ছে না। তাই সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুরাতন আইনই ফলো করা হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন পরিবহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে যানা গেছে, তারা যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজ সঙ্গে নিয়েই সড়কে নেমেছেন। তারা আরও জানান, আজ (শুক্রবার) ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করলেও মামলা দিচ্ছেন না। তবে, পথচারী ও চালকদের নতুন আইনে জেনে নেওয়ার জন্য বলছেন।

রাজধানীর সোনারগাঁও সিগন্যালে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বরত সার্জেন্ট অফিসার শফিউল আলম রাজীব বলেন, ‘আমরা ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যম মেসেজ পেয়েছি। নতুন সড়ক পরিবহন আইন আজ থেকে চালু হয়েছে। তবে, এই আইনের কোন ধারা লঙ্ঘনে শাস্তি ও জরিমানার কত তা জানি না।  তাই এখন আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা বা জরিমানা করছি না। তবে, যারা আইন অমান্য করছেন, তাদের সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।’

নতুন আইন বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ দেখছে পুলিশ

মগবাজার মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আশরাফ বলেন, ‘নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ বেশি। চালকরা আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই সড়কে নামতেন। আমরা মামলা দিলেও ওই চালকের লাইসেন্সের প্রতি আগ্রহ দেখতাম না। তবে এই নতুন আইনে যদি কেউ একবার জরিমানার আওতায় আসেন, তবে তিনি নিজ উদ্যোগে গিয়ে দ্রুত লাইসেন্স সংগ্রহ করবেন। যতটুকু শুনেছি, নতুন আইনটি খুবই ভালো। তবে, এটি বাস্তবায়ন কিছুটা কঠিন হবে।’  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক (উত্তর) বিভাগের উপ- কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘নতুন আইনের মাধ্যমে সড়কে চালকদের শৃঙ্খলার মধ্যে ফিরিয়ে আনা সম্ভবগ’

উদ্বেগে চালকরা

মহাখালী বাস টার্মিনালে থাকা বাসচালক আব্দুল মালেক বলেন, ‘নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। মামলা দিলে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে জরিমানার টাকা দিতে হবে।’  

নতুন আইন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘নতুন আইন সম্পর্কে চালক-হেলপার ও সাধারণ মানুষের অনেকেই জানেন না। এই আইন বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করা দরকার।’ তবে, সবদিক বিবেচনা করে আইন বাস্তবায়ন করলে সুফল পোওয়া যাবে বলেও তিনি মনে করেন।