আদালতে অসত্য তথ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ: ওয়াসার আইনজীবীকে হাইকোর্ট

 

হাইকোর্টবুড়িগঙ্গা নদীতে ঢাকা ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন নিয়ে দুই ধরনের প্রতিবেদন দাখিল করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত। ওয়াসার আইনজীবীকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘একবার বললেন, কোনও লাইন নেই। আবার বলছেন, আছে। আপনাদের কোন রিপোর্ট সত্য? আদালতে কেন অসত্য রিপোর্ট দিলেন? আদালতে অসত্য তথ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। এটা শাস্তিযোগ্য।’

সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মন্তব্য করা হয়।

আদালতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওয়াসার পক্ষে লিখিত জবাব দাখিল করেন ব্যারিস্টার এ এম মাছুম। তবে তিনি আদালতে উপস্থিত না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এসময় ওয়াসার আইনজীবীর পক্ষে আদালতে প্রতিবেদন দেন তার কনিষ্ঠ আইনজীবী নাহিয়ান-ইবনে-সুবহান। আর পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আমাতুল করিম।

এর আগে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, কেরানীগঞ্জের চর রঘুনাথপুর, কামরাঙ্গীরচর, জিনজিরা, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, বাদামতলী, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, শ্যামপুর, কদমতলী, ফতুল্লা, ধোলাইখাল, মিলব্যারাক, ফরিদাবাদ, গোসাইবাড়ি, মিলব্যারাক মাজার, লালবাগের সোয়ারীঘাট ও নলখোলা এলাকায় ৫০টি স্থান দিয়ে ওয়াসার সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে দূষিত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলা হচ্ছে।

অন্যদিকে ওয়াসার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাছুমের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসার সুয়ারেজ লাইন দিয়ে বুড়িগঙ্গার কোথাও বর্জ্য ফেলা হয় না।

তাই পরস্পর বিপরীত এ দুই প্রতিবেদন দেখার পর ১৭ নভেম্বর ওয়াসার এমডিকে শোকজ করেন হাইকোর্ট। নোটিশে আদালতের আদেশ অমান্য করা ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চান আদালত। একইসঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়।

পরে ওয়াসার এমডি তার লিখিত জবাবে ২০১১ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায় যথাযথ বাস্তবায়ন না করায় নিঃশর্ত ক্ষমা চান।

ওয়াসার এমডির লিখিত জবাবের সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে দেওয়া তার একটি চিঠির অনুলিপিও তুলে ধরা হয়। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে ওয়াসার এমডির দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের প্রতিবেদনে দাবি করা ওয়াসার ৫৮টি সুয়ারেজ লাইন বুড়িগঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। সেই সুয়ারেজ লাইনের আউটলেট/উৎসমুখ ঢাকা ওয়াসা ও বিআইডব্লিউটিএ’র প্রতিনিধিদের সরেজমিনে যৌথ পরিদর্শনে দেখিয়ে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।’

পরে ওইসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়, সুয়ারেজ লাইন থাকার বিষয়টি আদালতের কাছে অস্বীকার করলেও ওয়াসার এমডি ঠিকই বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে লাইনগুলো দেখিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তাই আদালত বলেন,  ‘এটা শুভংকরের ফাঁকি। দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এ ধরনের প্রতিবেদন দেওয়া হয়।’

আদালতে অসত্য প্রতিবেদন দেওয়ায় ওয়াসার দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান মামলার বাদী পক্ষ। তবে শুনানিতে ওয়াসার মূল আইনজীবী না থাকায় আদালত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।