পাপিয়ার বিরুদ্ধে তিন মামলার তদন্তভার র‌্যাবে

শামীমা নূর পাপিয়াজাল টাকা সরবরাহ, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক কাজ, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার যুবলীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিন মামলার তদন্তভার পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) থেকে র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপ-পরিচালক মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনি বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অস্ত্র-মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা তিনটি মামলার তদন্তভার পেয়েছে র‌্যাব। মঙ্গলবার ডিবির কাছ থেকে মামলাগুলোর তদন্তভার র‌্যাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলাগুলো তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনে আদালতের অনুমতিক্রমে পাপিয়াকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাপিয়াসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব ১-এর একটি দল। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), তাদের সহযোগী সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। তারা অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নানা অনৈতিক কাজ, জালনোট সরবরাহ, রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত বলে জানায় র‌্যাব।

গ্রেফতারের পর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর দেওয়ার তথ্য অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে হোটেল ওয়েস্টিনে পাপিয়ার নামে বুকিং করা বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট এবং ফার্মগেট এলাকার দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ ও নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি ব্যাংক চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির সুনির্দিষ্ট কোনও পেশা নেই। ঢাকা ও নরসিংদীতে তাদের গাড়ির শোরুম ও কার ওয়াশ সলিউশন সেন্টার থেকে বাৎসরিক আয় ১৯ লাখ টাকা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাপিয়া ও তার স্বামী মতি সুমনের অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে। তারা ঢাকা ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা করে অঢেল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও তাদের আয়ের অরেকটি উৎস হলো নারীদের দিয়ে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করানো। ৭ নারীকে এ কাজে ব্যবহার করতো পাপিয়া। এছাড়াও হোটেল ওয়েস্টিনে সবসময় পাপিয়ার নামে একটি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট বুক থাকতো। সর্বশেষ গত বছরের ১২ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৫৯ দিন ঢাকা ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে অবস্থান করে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা। সেখানে আনুষঙ্গিক খরচসহ সর্বমোট ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ টাকা নগদ পরিশোধ করে পাপিয়া।

রাজধানীর ফার্মগেটের ২৮নং ইন্দিরা রোডের ‘রওশনস ডমিনো রিলিভো’ ভবনে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে পাপিয়া-মতি সুমনের। এছাড়াও নরসিংদী শহরে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, নরসিংদীর বাগদী এলাকায় কোটি টাকার দুটি প্লট রয়েছে। তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য রয়েছে কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ি। এছাড়াও তেজগাঁও বিএফডিসি গেটের পাশে অংশীদারিত্বে পাপিয়ার ‘কার একচেঞ্জ’ নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। নরসিংদী জেলায় ‘কেএমসি কারওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও পাপিয়া-মতি সুমন দম্পতির দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত থাকার তথ্যও রয়েছে।