‘সাংবাদিকরা জেগে থাকলে সমাজে অপরাধ কম হয়’

আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

সাংবাদিকরা জেগে থাকলে সমাজে অপরাধ কম হয় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন। মধ্য রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে তুলে নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে দেওয়া সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। সোমবার (১৬ মার্চ) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। শুনানিকালে আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, একজন পদধারী ব্যক্তি রাষ্ট্র বা সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করে না। ওই ব্যক্তি বা পদধারী যদি কোনও অন্যায় করে থাকেন, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা সরকার যদি তাকে সমর্থন না দেয় সেটাই হবে আইনের শাসন। আর সরকার বা রাষ্ট্র যদি ব্যক্তির অন্যায় কাজে সমর্থন দেয় সেটা আইনের লঙ্ঘন।

আদালত বলেন, কুড়িগ্রামের ওই ঘটনার পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমে কথা বলেছেন। উনি বলেছেন, ডিসি যদি অপরাধ করে তাহলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। আমরা উনার বক্তব্যর প্রসংশা করছি। আমি মনে করি, আমরা একজন ভাল মন্ত্রী পেতে যাচ্ছি।

এসময় আমিন উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। তারাই সমাজের নানান ত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরেন। সাংবাদিকরা জেগে থাকলে সমাজে অন্যায় কম হয়। কুড়িগ্রামে মধ্য রাতে বাসার দরজা ভেঙে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে একজন সাংবাদিককে যেভাবে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা ক্ষমতার অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, সংবাদপত্র সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভ (সাংবাদিকরা) যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। শুনানি শেষে আদালত মধ্য রাতে বাসার দরজা ভেঙে সাংবাদিক আরিফুলকে সাজার মামলার নথি তলব করেন। পাশাপাশি পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৩ মার্চ দিন ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এসময় তার বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। যদিও আরিফ অধূমপায়ী।

আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড প্রদানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়। রবিবার (১৫ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক  হারুন উর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন।

রিট আবেদনে টাস্কফোর্সের নামে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থি হবে না, আরিফুল ইসলামকে ৫০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।

এছাড়াও রিটে কুড়িগ্রামের ডিসি, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আরিফের বিরুদ্ধে করা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলার নথি এবং টাস্কফোর্স পরিচালনার নথি তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়।