লিবিয়ায় নির্যাতনের ভিডিও স্বজনদের পাঠাতো মনির

মনির ও সেলিমলিবিয়ায় পাচার হওয়া মানুষকে নির্যাতনের পর ধারণ করা ভিডিও স্বজনদের মোবাইলে পাঠিয়ে যে মোটা অংকের টাকা দাবি করতো, সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) বিকালে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি জানিয়েছে, মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতা মনির হাওলাদার ওরফে মনির হোসেন (২৬)। সে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবক ও তরুণদের টার্গেট করে লিবিয়ায় পাচার করতো। লিবিয়ায় তাদের নির্যাতনের পর ভিডিও ধারণ করতো পাচার চক্র। এসব ভিডিও মনির নির্যাতিতদের স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করতো। মনিরের সঙ্গে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। তার নাম সেলিম ওরফে সেলিম শিকদার (৩৫)। গ্রেফতারকৃত দুজন মতিঝিল থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় অভিযুক্ত।
মশিউর রহমান জানান, বুধবার, ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় যাত্রাবাড়ীর কাজলায় যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে গুলশান জোনাল টিম এবং সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন গুলশান জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম সাকলায়েন। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত দুজনসহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা মিলে শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফেনী, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ সরল লোকজনদের টার্গেট করে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় যেতে আগ্রহী লোকজন সংগ্রহ করতো। এরপর তাদের পাসপোর্ট ও ছবিসহ ঢাকায় দালালদের কাছে পাঠিয়ে দিতো।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও জানান, মানবপাচার চক্রের অন্যতম মূল হোতা মনির হাওলাদার অল্পবয়সী ও অল্প পড়াশুনা করলেও অত্যন্ত চতুর। অল্প সময়ের মধ্যেই লিবিয়ার মিলিশিয়া, সেনাবাহিনী ও লোকাল পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। মনির ও তার সহযোগীরা প্রত্যক্ষভাবে বেনগাজীর মাঝুরী, ত্রিপলির সুলেমান এবং জোয়ারার গেমিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন।
মনির প্রথমে ২০১০ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১৫ সালে এবং ৩য় বার ২০১৮ সালে লিবিয়ায় যায়। মনির লিবিয়াতে প্রথমে একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে শ্রমিকের চাকরি করতো। সে পরবর্তী সময়ে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দালাল শরীফ ও কবিরদের পরিচালিত স্বাধীন ট্রাভেলসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতাধিক লোককে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে লোকজন বেনগাজীতে পৌঁছার পর মনির দফায় দফায় তাদেরকে বিভিন্ন বন্দিশালায় আটকে রাখতো। বন্দিশালায় আটক রেখে উক্ত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে চুক্তির টাকাসহ অতিরিক্ত অর্থ দাবি করতো। তাদের মারধরের ভিডিও ধারণ ও কান্নার শব্দ মোবাইলে রেকর্ডিং করে পাচার হওয়া লোকদের স্বজনদের পাঠাতো।
গ্রেফতারকৃতদের আদালত সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
সম্প্রতি লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা অতিরিক্ত টাকার জন্য তাদের বন্দিশালায় জিম্মি করা ২৬ জন বাংলাদেশিসহ মোট ৩০ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। এসময় ১১ জন গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় প্রায় ২৬টির বেশি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭১ মানব পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব, ডিএমপি ও সিআইডি।