২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে পবিত্র আশুরার মিছিলের প্রস্তুতিকালে তাজিয়া মিছিলে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে দুই জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক শফিউদ্দিন ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগপত্রে ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১১ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। গত ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর আবু সাঈদ নামে এক ব্যক্তি আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর থেকে আর কোনও সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়নি। এখন পর্যন্ত ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
মামলাটি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামি ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। বর্তমানে মামলাটি সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলায় আসামিদের মধ্যে কবির হোসেন, রুবেল ইসলাম, আবু সাঈদ, আরমান কারাগারে আটক আছেন এবং হাফেজ আহসান উল্লাহ মাসুদ, শাহ জালাল, ওমর ফারুক ও চাঁন মিয়া জামিনে আছেন। দুই আসামি জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানা নাবালক হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে বিচারাধীন আছে।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সরোয়ার খান জাকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলাটি ২০১৮ সালে অন্য আদালত থেকে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়ে আসে। এ পর্যন্ত মামলাটির ১১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সাক্ষ্যগ্রহণের মাঝখানে জাহিদ হাসান নামে এক আসামি নাবালক বলে তার আইনজীবী অধিকতর তদন্ত করে পৃথক অভিযোগপত্রের আবেদন করেন। বিচারক আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৩ মে তদন্ত কর্মকর্তা আসামি জাহিদ হাসানকে নাবালক দেখিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর ২৯ জুন বিচারক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। এরপর বিচারক মামলাটি শিশু আদালতে বদলির আদেশ দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একইভাবে মাসুদ রানা নামে আরেক আসামি নাবালক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্রে আবেদন করেন তার আইনজীবী। এরপর বিচারক আবেদন করে পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিলে গত বছরের শেষের দিকে তদন্ত কর্মকর্তা আসামি মাসুদ রানাকে নাবালক দেখিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর মামলাটি চলতি বছরের শুরুর দিকে বিচারক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিচারের জন্য শিশু আদালতে বদলির আদেশ দেন। বর্তমানে আসামি জাহিদ হাসান ও মাসুদ রানার শিশু হওয়ায় তাদের বিচার শিশু আদালতে এবং বাকি আট আসামির বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।’
বিচারের ধীর গতি নিয়ে গোলাম সরোয়ার খান জাকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূলত এই দুই আসামির বয়স জটিলতা এবং করোনাভাইরাসের কারণে ভার্চুয়াল আদালত হওয়ায় সাক্ষী নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি শিগগিরই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তি করতে পারবো।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘এই মামলাটি কেমন তদন্ত হলো যে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর আসামির বয়স নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? প্রকৃতপক্ষে এই আসামিরা ঘটনার সঙ্গে কতোটা সম্পৃক্ত সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ। এখানে দায়সারা তদন্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন।’