চাঁদাবাজির অভিযোগে সেন্টু কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলা

কমিশনার সেন্টুচাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩১নং ওয়ার্ড কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল মার্কেটের একজন জুস ব্যবসায়ী কমিশনারের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করেন। তবে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই কমিশনার চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিয়েছি। আসামিদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
মামলার বাদী টাউন হলের ‘সিঙ্গাপুর জুস অ্যান্ড কফি বার’-এর মালিক মো. তরিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২০ সেপ্টেম্বর কমিশনার সেন্টু আমাকে তার অফিসে যেতে বলেন। আমি ভয়ে যাইনি। কারণ, তিনি এর আগেও আমাকে ডেকে চাঁদা চেয়েছিলেন। আমি না যাওয়ায় সেন্টু কমিশনার ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে আমার দোকানে আসেন। এসেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমাকে মারধর করেন। কর্মচারীরা এ সময় ভয়ে দূরে চলে যায়। আমার বাবা এলে তাকেও মারধর করেন। রাত ১২টা পর্যন্ত আমরা দোকানের বাইরে ছিলাম। ১২টার পর আমরা পুলিশের সহায়তায় দোকানের ভেতরে যাই। সেন্টুর ভয়ে সবাই আতঙ্কিত। কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি ভয়ঙ্কর খারাপ লোক। সবজি বিক্রেতার কাছ থেকেও চাঁদা নেন তিনি। আমরা এর আগে আরও কয়েকবার চাঁদা দিয়েছি তাকে। কিন্তু এখন ব্যবসার অবস্থা ভালো না, এখনও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তিনি চাঁদা দাবি করছেন।’

মাসিক ৩৩ হাজার টাকা ভাড়ায় সিটি করপোরেশন থেকে টাউন হলের একটি দোকান চার বছর আগে ভাড়া নেয় তরিকুল ইসলাম ও তার ভাইয়েরা। তারা কাঁচা ফলের জুস তৈরি করে বিক্রি করেন। দোকানে বিক্রিও ভালো। বড় ভাই দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে থাকায় দোকানের নাম দিয়েছেন ‘সিঙ্গাপুর জুস অ্যান্ড কফি বার।’ দোকানে বিক্রিও ভালো।

তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘আমরা উপায় না পেয়ে মামলা করেছি। তিনি পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। এত টাকা আমরা কীভাবে দেবো? আমরা প্রয়োজনে এখানে ব্যবসা করবো না, চলে যাবো।’ 

তবে চাঁদা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিএনসিসির ৩১নং ওয়ার্ডের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করি, এমন অভিযোগ কেউ দিতে পারবে না। টাউন হলের সামনের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে, তাদের ফুটপাত থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করায় এই মামলা করেছে। এর আগেও অনেকবার তাদের বলা হয়েছে, কিন্তু তারা কথা শোনে না। টাউন হলের সামনের ফুটপাতে পথচারীদের হাঁটার কোনও উপায় নেই। ফুটপাতের ওপরে গ্যাস সিলিন্ডার, দোকান। গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান। তাদের সরাতে গেলেই একটি ঝামেলা হবে।’

তিনি এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক ও সাজানো বলে উল্লেখ করেছেন। কমিশনার বলেন, ‘এটি মিথ্যা মামলা। আমি জানার চেষ্টা করছি কেন মামলা হলো, কেন আমার বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হলো। আমি বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবিলা করবো।’

মামলায় কমিশনার শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ আট জনকে আসামি করা হয়েছে। অপর আসামিরা হলেন, সেলিম (৫৫), বাবুল (৫২), আবুল মণ্ডল (৬০), মো. সালাম (৪০), মো. লাবু (৩৬), মো. চৌধুরী (৫০) ও মো. মোহন (৫০)। তারা সবাই সেন্টুর অনুসারী।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’