২০ বছর বয়সী তরুণের লাখ লাখ টাকার প্রতারণা!

নাম আশরাফুল ইসলাম দিপু, বয়স আনুমানিক ২০ বছর। পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এত অল্প বয়সে কম পড়াশোনা করেই প্রতারণার এক মহা উৎসবে মেতেছেন এই তরুণ। হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। কখনও সরকারি শীর্ষ কর্মকর্তা, কখনও ব্যবসায়ী, আবার কখনও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র নেতা। প্রতারণার স্বার্থে সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয় দিয়ে চলেন তিনি। নাম ঠিক রাখলেও বদলে যাওয়া পরিচয়ে চড়েন দামি গাড়িতে, বসেন পাঁচ তারকা হোটেলে। 

ভোলার এই তরুণের আপাতত পরিচয় ‘জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর পরিচালক। আর এই পরিচয় ব্যবহার করে রাজধানীর ভাটারায় বসবাসকারী সুমি আক্তারকে (২৪) প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কার্যালয়ে সহকারী পদে চাকরির জন্য। সরকারি চাকরির এমন প্রলোভনে পড়ে নিজেদের সামলাতে না পেরে তিন কিস্তিতে লাখ  টাকা দিয়েছেন সুমি আক্তার। সঙ্গে চালাতে দিয়েছেন দামি একটি গাড়ি। কিন্তু কথাবার্তার এক পর্যায়ে এই তরুণকে সন্দেহ হয় ভুক্তভোগী সুমি আক্তার ও তার স্বামী মীর সজলের। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন যে এই তরুণের ফাঁদে পড়েছেন তারা। পরে রাজধানীর ভাটারা থানায় আশরাফুল ইসলাম দিপুর নামে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তদন্তের কয়েকদিনের মাথায় রাজধানীর পল্লবীর সেকশন ১১ রোড নম্বর ২ ব্লক -বির একটি বাসা থেকে এই তরুণকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার হেফাজত থেকে আটটি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, দশটি সিম কার্ড, সরকারি গেজেটের প্রিন্ট কপি, তিনটি ফেক ফেসবুক আইডি উদ্ধার করে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরও ভয়াবহ তথ্য পেয়েছি। সে দীর্ঘদিন ধরে নানারকম প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার কাজে ব্যবহারের জন্য সে একাধিক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতো। সর্বশেষ সে নিজেকে নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও গুলশান ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সেক্রেটারি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বলে একাধিক ভিডিও প্রচার করছেন। যে ভিডিওগুলো দেখিয়ে সে নতুন ফাঁদ পাতার পরিকল্পনা করেছেন। 

ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, দীপুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পর লাখ লাখ টাকা প্রতারণার কথা সে স্বীকার করেছে। তার কাছে সরকারি বিভিন্ন চাকুরির ভুয়া গেজেট পেয়েছি আমরা। জানতে চাইলে, সে জানিয়েছে মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য এসব গেজেট সে নিজের কাছে রাখে। মানুষের জন্য তদবির করে। আমরা তাকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছিলাম। আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।