দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার অনৈতিক দাবির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আসামিরা

সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ঘটনায় এক দম্পতির বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। কিন্তু তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে। এ কারণে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে দুদকে বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও প্রতিকার পাননি মামলার দুই আসামি। ফলে ন্যায়বিচারের স্বার্থে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেছেন খোদ আসামিরাই। 

জানা গেছে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য জানাতে ২০১৯ সালের ৩ মার্চ মো. আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগমকে নোটিশ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার ঢাকা সদরের সাবেক সাব রেজিস্ট্রার এবং বর্তমানে তিনি পিরোজপুরের জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। দুদকের (ঢাকা-১) উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওই নোটিশ দেন। তবে  নোটিশের উপযুক্ত জবাব না মেলায় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর ওই দম্পতিকে আসামি করে ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে মামলা করে দুদক। ২৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৩ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন, ৯০ লাখ ১২ হাজার ৭৯৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তা দখল রাখার অপরাধের জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, আবদুল কুদ্দুস হাওলাদার সাব-রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরি করার সুবাদে দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উপার্জিত অবৈধ অর্থ দিয়ে তার নিজ নামে সম্পদ অর্জন করেন। এই সম্পদ নিজ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

মামলা দায়েরের পর তদন্তে নামেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। অভিযোগ, তদন্তের সময় আলমগীর হোসেন বারবার আসামিদেরকে অনৈতিক লেনদেনের প্রস্তাব দিতে থাকেন। দুদক কর্মকর্তার এমন প্রস্তাবে অতিষ্ঠ হয়ে অভিযুক্ত দম্পতি  প্রতিকার খুঁজতে থাকেন দুদকের কাছেই, যার ধারাবাহিকতায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে অসাধু তদন্ত কর্মকর্তার পরিবর্তন চেয়ে দুই দফা দুদকে আবেদন করেন তারা।

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর এবং চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে ওই আবেদন জানান মো. আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদার ও তার স্ত্রী মাহিনুর বেগম। আবেদনে তারা অভিযোগ করেন — ‘২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সদর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োজিত থাকাকালীন গণশুনানির মাধ্যমে জনৈক উমেদারের অনৈতিক চাহিদা আমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করে ২০১৮ সালে দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ গঠন করে। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমাকে নোটিশ প্রেরণ করেন এবং তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বললে, আমি ও আমার ভাই তার সঙ্গে দেখা করি এবং আমাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসি। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করেন। এ বিষয়ে আমি অপরাগতা প্রকাশ করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী আমলে না নিয়ে নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আদালত থেকে স্থায়ী জামিনপ্রাপ্ত হই।’ তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে আবেদনের বিষয়বস্তু বিবেচনা করে একজন নিরপেক্ষ তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদানের দাবি জানান মামলার আসামিরা।

তবে আসামিপক্ষের আবেদনের ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি দুর্নীতি দমন কমিশন। তাই প্রতিকারের আশায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মামলার দুই আসামি ওই দম্পতি। রিটে ‘দুদকে দায়ের করা আবেদন’ নিষ্পত্তির আবেদন জানানো হয়। একইসঙ্গে রিট আবেদনে দুদক কর্মকর্তার অনৈতিক লেনদেনের দাবির বিষয়ে অডিও-ভিডিও আদালতে দাখিল করা হবে বলেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি রিটকারীদের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিট মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির জন্য উঠেছে। রিটকারীরা তাদের রিট আবেদনে জানিয়েছেন— দুদক কর্মকর্তার অনৈতিক লেনদেন দাবির বিষয়ে তারা হাইকোর্টে অডিও-ভিডিও ক্লিপ দাখিল করবেন। তাই আদালত তাদেরকে সেসব ক্লিপ দাখিল করতে আগামী ৭ মার্চ দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন,‘তদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দুদক কর্মকর্তা যদি অনৈতিক লেনদেনের সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করে থাকেন, তবে তা হবে বেআইনি। আশা করছি, আদালতে বিষয়টির সুরাহা হবে।’