তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা, তদন্তের নির্দেশ

কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রফেসর ডা. আব্দুল ওহাব খানসহ (কনসালট্যান্ট ল্যাপারোস্কপিক সার্জন) তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রবিবার (২০ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে নিহতের বাবা আক্তারুজ্জামান মিয়া বাদী হয়ে মামলাটির আবেদন করেন। পরে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার অপর দুই আসামি হলেন ল্যাবএইড হসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডিপার্টমেন্টের ডা. মামুন আল মাহতাব এবং বিআরবি হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলী।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন এসব তথ্য জানান।

অভিযোগে জানা যায়, ভুল চিকিৎসায় রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে ডা. তৌফিক এনাম নামে এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এই অভিযোগে নিহতের বাবা আক্তারুজ্জামান মিয়া অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলার আবেদন করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাদীর ছেলে ডা. তৌফিক এনাম অসুস্থ হলে ৪ মে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল কাকরাইল শাখার ডা. আব্দুল ওহাব খানকে দেখান। এরপর তার অধীনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে রোগীর গলব্লাডারে পাথর হয়েছে। পরের দিন ৫ মে বাদীর ছেলেকে ডা. ওহাব অপারেশন করেন। ৬ মে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরপর ৯ মে সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হলে ডা. ওহাব খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জরুরি ভিত্তিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ডা. মামুন-আল-মাহতাব স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর ল্যাবএইড হাসপাতালের ডা. স্বপ্নীলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দেখেন, গলব্লাডার অপারেশনের সময় ভুল জায়গায় ক্লিপ লাগানো হয়েছে। এরপর ডা. স্বপ্নীল জেনেশুনে বেশি টাকার জন্য ইআরসিপি উইথ স্ট্যাংটিং করে ব্যর্থ চেষ্টা করেন। এ কারণে রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।

এরপর তিনি জরুরি ভিত্তিতে বিআরবি হাসপাতালের প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠান। ডা. ওহাব ও ডা. স্বপ্নীল দুজনের যোগসাজশে অপর ডা. মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঠানো হয়। ডা. মোহাম্মদ আলী গত ১২ মে জরুরি ভিত্তিতে রোগীকে বিআরবি হাসপাতাল ভর্তি করান। এরপর ডাক্তার মোহাম্মদ আলী রোগীর স্বজনদের বলেন, ‘রোগীর অবস্থা ভালো না। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। তার আগে যে দুজন অপারেশন করেছেন সেখানে অবহেলা ছিল। জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন না করলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না।’

গত ৩০ মে বাদীর ছেলেকে ডা. মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে বিআরবি হাসপাতালে অপারেশন করান। প্রথমে বাদীকে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হবে বলে জানান। ৩ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করার পর আবারও ৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন বলে জানান ডা. মোহাম্মদ আলী। তিনি জানান, রক্ত না দিতে পারলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না। এরপর হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাদীর স্বজনদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বাদী ছেলে ডা. তৌফিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।