মৃত ব্যক্তির ‘অনুসন্ধান’ করতে চায় দুদক

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এজন্য এসব ব্যক্তির নথি তলব করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন মারা গেছেন গত বছর। নথি তলব করা ওই মৃত ব্যক্তি হচ্ছেন ডিএসসিসির সাবেক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। ২০২০ সালের ২৩ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

আইন অনুযায়ী মৃতের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে পারে না দুদক। পাশাপাশি মামলা চলাকালে কেউ মারা গেলে তাকে তাৎক্ষণিক মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

দুদক বলছে, পুরনো ও নতুন মিলিয়ে বিভিন্ন পেপার কাটিং ও অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চলছে। এজন্য করপোরেশন থেকে ব্যক্তিগত নথি চাওয়া হয়েছে। অভিযোগগুলো অনেক আগের হওয়ায় এমনটা ঘটেছে। এখন দুদকের লিগ্যাল সেকশন বিষয়টি দেখবে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, দায়িত্ব পালনে দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম, সিন্ডিকেট, বদলি বাণিজ্য, দোকান বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ নানা কারণে অনুসন্ধানের জন্য দুই সিটি করপোরেশনের ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নথি তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি দুই সংস্থার ১০টি ফাইলপত্রের সত্যায়িত কপি চাওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ৩০ জুনের মধ্যে নথিগুলো পাঠাতে বলা হয়েছিল। দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সই করা চিঠিতে তথ্যগুলো চাওয়া হয়েছে।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অভিযোগ ও পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করি। এক্ষেত্রে অনেক অভিযোগ পুরনো থাকে। যখন চিঠি ইস্যু করা হয় তখন আমাদের কাছে সর্বশেষ তথ্য থাকে না। এখন যে অভিযোগগুলো এসেছে সেটার ফাইল অনেক বড়। প্রায় ৯১ পাতার মতো। এতে পেপার কাটিং ও লিখিত অভিযোগ রয়েছে। যাদের নামে অভিযোগ এসেছে তাদের ফাইল চেয়েছি। এরমধ্যে কিছু রিপোর্ট ছিল তিন-চার বছর আগের। যে কারণে মৃত ওই ব্যক্তির নামও এসেছে।’

মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না। আমরা তাদের ফাইল চেয়েছি। তাদের পদবি, পোস্টিং ও সর্বশেষ অবস্থা সিটি করপোরেশন আমাদের জানাবে। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত যিনি তার বেলায় একরকম হবে। বর্তমানে কর্মরত যারা আছেন তাদের হিসাবটাও আলাদা হবে। আর মৃত হলে তো তিনি মামলা থেকেই বাদ পড়বেন।’

দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আরিফ সাদিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন অফিস বন্ধ। অনুসন্ধানের জন্য তথ্য চেয়ে কোনও চিঠি পাঠানো হয়েছে কিনা জানা নেই।’

মৃত ব্যক্তির অফিসিয়াল ফাইল তলবের আইনগত সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা দুদকের লিগ্যাল সেকশন দেখবে।

তবে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান মনে করেন, তদন্ত কর্মকর্তা যে কারও ফাইল তলব করতে পারেন। কারণ, একটি ফাইলের সঙ্গে অনেকের সম্পর্ক থাকতে পারে। তবে মৃতের বিরুদ্ধে মামলা বা অনুসন্ধান করা যাবে না। তাছাড়া কেউ মারা গেছেন কিনা সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার না-ও জানা থাকতে পারে।