ইভ্যালির রাসেলের রিমান্ড ও জামিন শুনানিতে যা বললেন আইনজীবীরা

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিন, ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, রাসেল এবং তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন পেশাদার প্রতারক চক্রের মূল হোতা। তারা তাদের সহযোগী প্রতারকদের সহায়তায় বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কৌশলে অগ্রীম পণ্যমূল্য গ্রহণ করেও ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ না করে বিপুল পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছে।

মামলার মূল রহস্য উদঘাটন, আসামির সহযোগী অজ্ঞাতনামা অন্যান্য প্রতারকদের শনাক্তসহ গ্রেফতার এবং এ মামলার বাদীর দুই লাখ ২০ হাজার ১২৬ টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি ব্যবসার নাম করে গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সত্যিকারের ব্যবসায়ী হলে তারা এ ধরনের কাজ করতে পারতো না। পুলিশ তাদের রিমান্ড চেয়েছে রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।’

আসামির পক্ষে এম মনিরুজ্জামান আসাদ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘আগেও রাসেলকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগ, ধারা প্রায় একই। করোনার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তারা কিছু গ্রাহকের পণ্য সরবরাহ করেননি। কিন্তু তারা তো বলেননি পণ্য সরবরাহ করবেন না বা টাকা ফেরত দিবেন না। অবশ্যই তারা তাদের শর্ত পূরণ করবেন। এখন আবার রাসেলের আরেকটি মামলায় রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন চাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘তার বাড়ি আছে। পাসপোর্ট জমা রেখে বা যেকোনও শর্তে তার জামিন চাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও নাই। জামিন পেলে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিবেন।’

এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, ‘ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে শত শত মামলা হবে। এটা তো শুরু। প্রতিষ্ঠানটি যাদের টাকা দেয়নি তারা কি বসে থাকবে। ইভ্যালি শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। মানিলন্ডারিং মামলাও হবে। তারা বুঝে শুনে টাকা আত্মসাৎ করেছে। এরপর যদি তারা প্রমাণ করতে পারেন যে টাকা নেয়নি। তাহলে তারা অব্যাহতি পাবেন।’

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রাসেলের রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর দুই লাখ ২০ হাজার ১২৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আব্দুর রহমান রাকিব নামে এক গ্রাহক ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দেখে আব্দুর রহমান রাকিব নামের ওই ব্যক্তি দুইটি মোটরসাইকেলের অর্ডার দেন। ৫ মার্চ তিনি অর্ডার-বাবদ সকল মূল্য পরিশোধ করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য না পেয়ে রাকিব প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগাযোগ করে। সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট পণ্য দুটি পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে তিনি ইভ্যালির অফিসে যান। রাসেলের সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এরপর গত ১০ সেপ্টেম্বর তিনি আবারও অফিসে যান। সেখানে প্রতিনিধির সাথে পণ্যের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার ও খারাপ আচরণ করে। তারা টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা রাকিবকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি হওয়ার পর ওইদিন বিকালেই রাসেলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।