মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে ইসলামিক বক্তা মুফতি কাজী ইব্রাহীমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালত এ আদেশ দেন। এর আগে কাজী ইব্রাহীমের ১০ দিনের রিমান্ড চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, ‘মুফতি ইব্রাহীম একজন ইসলামি বক্তা। আমি নিজেও মাঝে মাঝে উনার বক্তব্য শুনি। যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এ দেশে বসবাস করে, তাই আলেমদের এখানে সম্মান করা হয়। সেই সুযোগ নিয়ে মুফতি ইব্রাহীম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছেন। এর পেছনে কারা জড়িত তা বের করতে তদন্ত কর্মকর্তার প্রার্থিত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আর্জি জানাচ্ছি।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক শুনানিতে বলেন, ‘মুফতি ইব্রাহীম একজন হাদিস বিশারদ। তিনি কোনও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তিনি কোরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তব্য দেন। হয়রানিমূলক তার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে দুই দিন ডিবি হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তাই রিমান্ডের কোনও যৌক্তিকতা নেই।’
এ সময় কাজী ইব্রাহীম আদালতকে বলেন, ‘তৎকালীন মিসর সরকার হজরত ইউসুফ (আ.)-কে শাসক হিসেবে নিজেই দায়িত্ব দেন। আমার থিম ও স্বপ্ন হলো—বাংলাদেশের সরকারও একসময় এমন কোনও একজন আলেম বা যোগ্য লোককে এই দেশের দায়িত্ব দেবেন। শাসক ও আলেম মিলে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেইনি; বরং তাদের পক্ষেই কথা বলেছি।’ এ সময় তিনি কেঁদে ফেলেন।
এরপর আদালত কাজী ইব্রাহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘রিমান্ড মানে আপনাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জিজ্ঞাসা করবে। আপনাকে যা জিজ্ঞাসাবাদ করে ঠিকমতো উত্তর দেবেন। রিমান্ড মানে অন্য কিছু না যে মারধর করবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। রিমান্ড মানে ভয়ভীতির কিছু না।’
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই সরকারের আমলে গত ১০ বছরে আমাদের ২-৩ হাজার মানুষকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ড শেষে দেখা গেছে অনেকে ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। তার রিমান্ড বাতিলের প্রার্থনা করছি।’
এরপর আদালত কাজী ইব্রাহিমের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। যেহেতু কাজী ইব্রাহীম আলেম মানুষ, সেহেতু তাকে ভদ্রতার সঙ্গে আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় এ মামলা করেন। এর আগে একই থানায় তার বিরুদ্ধে একটি প্রতারণা মামলা হয়। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর লালমাটিয়ার জাকির হোসেন রোডের বাসা থেকে তাকে আটক করে ডিবির একটি দল।
আরও পড়ুন...
যেসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন মুফতি ইব্রাহীম