শিল্পকলা একাডেমিতে দুর্নীতি

ভাউচার ‘ভুয়া’ স্বীকার করা সেই কেয়ারটেকারকে চাঁদপুর পাঠানো হলো

সংগীত বিভাগের সহকারী পরিচালক ফারহানা রহমানের কক্ষে ব্যবহারের জন্য পর্দা ও ফার্নিচার বাবদ চেক নং ২৬৭০৫৩১-৩২-এর মাধ্যমে এক লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে এসব পর্দা, ক্রোকারিজ ও ফার্নিচারের ভাউচারের বিপরীতে কোনও মালামাল কেনার প্রমাণ মেলেনি। 

কেনাকাটার ভাউচারে যার স্বাক্ষর রয়েছে সেই কেয়ারটেকার (প্রশাসন) সাইদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনের কাছে স্বীকার করেন, তারা বরাবরই ভাউচার ম্যানেজ করেন তারপর ধীরে ধীরে কেনেন। আর এই বক্তব্য প্রকাশ পাওয়ার আট দিনের মাথায় তাকে চাঁদপুর বদলি করে দেওয়া হয়েছে। 

একাডেমির একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা এও বলছেন, এই কেনাকাটার ভাউচারে সাইদুরের স্বাক্ষর আছে ঠিকই কিন্তু এর কোনোটিই সে তার ইচ্ছামাফিক করেছে বলে মনে করার কারণ নেই। বড় কর্মকর্তাদের বাঁচাতেই তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি কেউ।

গত ৩ অক্টোবর বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়, ‘শিল্পকলায় দুর্নীতি: পর্দা, প্লেট, সোফা কার জন্য কে কিনলো!’ শিরোনামের প্রতিবেদন। যেখানে দেখানো হয় কীভাবে লাখ টাকার ভাউচার বানানো হলেও সেসব কেনাকাটার কোনও অস্তিত্ব মেলেনি। এমনকি যার অফিসকক্ষের নামে কেনা হয়েছে তিনি কখনও এমন কিছু প্রয়োজন বলে কোন রিকুইজিশন দেয়নি।

সরকারি অফিসে এটা কেনাকাটার নিয়ম কিনা প্রশ্নে সেদিন সাইদুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনে হয়নি। আগামীতে আর এভাবে কাজ করবো না। এই কেনাকাটা সচিব ম্যাডামের অনুমতিতে দ্রুত করার জন্য এভাবে করা হয়েছিল। কিন্তু এভাবে করা ঠিক হয়নি। তানিয়া বেডিং থেকে আগেও জিনিস নিয়েছি। এবার ভাউচার নিয়েছি।

মনিকা ফার্নিচারের ভাউচারে লেখা ঠিকানায় গিয়ে দোকান পাওয়া যায়নি কেন জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘আছে দোকান। এগুলো ছোটখাটো কেনাকাটা। আমরা এভাবেই কিনি।’ 

মনিকা ফার্নিচারের মালিকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। ভাউচারটি আমি ম্যানেজ করেছি।’

এই পর্দা, ক্রোকারিজ, ফার্নিচার কেনার নামে যে এক লাখ ৪০ হাজার ৫২০ টাকার ভুয়া ভাউচার- সেটি ম্যানেজ করেছেন শিল্পকলার দায়িত্বশীল কেয়ারটেকার (প্রশাসন) সাইদুর রহমান। তিনি সেটি বাংলা ট্রিবিউনের কাছে স্বীকারও করেন জানানো হলে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সেসময় বলেন, এ বিষয়ে তার জানা নেই। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার পক্ষপাতি আমি নই।’ 

এর আট দিনের মাথায় তাকে বদলি করা হলো। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বদলিকৃত সাইদুর রহমান যে স্তরে কাজ করেন তিনি তার সিদ্ধান্তে এসব করেছেন এটা হতে পারে না। তাকে নির্দেশদাতা যারা, তাদের বাঁচাতেই এই বদলি করা হয়েছে।

বদলি বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তাকে না পেয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসান মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।