কে হচ্ছেন ঢাকার নতুন পুলিশ কমিশনার?

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের চাকরির বয়স শেষ হবে আগামী ৩০ অক্টোবর। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার কে হতে পারেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, দুই-একদিনের মধ্যেই নতুন কমিশনার নিয়োগ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নথিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে আরও এক বছরের জন্য মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

জানা গেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। আগামী ৩০ অক্টোবর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের। এ কারণে কয়েক দিন ধরেই নতুন কমিশনার কে হতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে পুলিশ বাহিনীতে। পুলিশের প্রায় সব স্তরের কর্মকর্তাদের মুখেই বিভিন্ন জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে নতুন কমিশনার হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে পুলিশের বারো, পনের ও ১৭তম ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তার নাম। এরমধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ১২তম ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি এসএম রুহুল আমিন, একই ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন, একই ব্যাচের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম, হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. কামরুল আহসান, বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমি, সারদার প্রিন্সিপাল অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুক, ১৫তম ব্যাচের পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ১৭তম ব্যাচের ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি হাবিবুর রহমান আলোচনায় রয়েছেন।

ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অষ্টম ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর এএসপি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রামের রেঞ্জ ডিআইজি ও ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এইচআরএম শাখার প্রধান ও সিআইডি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান কমিশনারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে থেকেই নতুন কমিশনার হওয়ার জন্য একাধিক কর্মকর্তা তদবির করছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কাকে রেখে কাকে কমিশনার পদে পদায়িত করবেন তা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তুলনামূলক ঊর্ধ্বতন ব্যাচের কর্মকর্তাদের রেখে নিচের ব্যাচের কোনও কর্মকর্তাকে কমিশনার পদে পদায়িত করা হলে বাহিনীতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও আলোচনা চলছে। এ কারণে বর্তমান কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া অথবা ১২তম ব্যাচের কাউকে এই পদে পদায়িত করা হতে পারে।

গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ কারণে এখন যিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন কমিশনার হবেন তিনি নির্বাচনের সময়ও দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী নানারকম অপতৎপরতা হতে পারে। এসব মোকাবিলায় একজন দক্ষ কর্মকর্তাকে ডিএমপি কমিশনার পদে পদায়িত করা হবে। এজন্যই কমিশনার নিয়োগে সরকারকে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলে পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের যথাযথ পদোন্নতি পেতে জটিলতা তৈরি হয়। পুলিশের উপরের দিকে পদের সংখ্যা অনেক কম। এ কারণে এমনিতেই সবার যথাযথ পদোন্নতি পাওয়া সম্ভব নয়। এরমধ্যে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলে এই জটিলতা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।