৬ বার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছিল ওরা

সর্বশেষ সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করাসহ অন্তত ছয়বার বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছিল ওরা। প্রশ্নফাঁসকারী এই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা হলেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস সহকারী দেলোয়ার। বুধবার (১৭ নভেম্বর) রাতে দেলোয়ার ও তার আরও দুই সহকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃত অপর দুই সহযোগী হলেন পারভেজ ও রবিউল। তারা তিন জনই আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার আরও অন্তত পাঁচ-ছয়বার প্রশ্ন ফাঁস করার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া তিনি প্রশ্নফাঁসের নেপথ্যে ঊর্ধ্বতন কয়েকজনের নাম বলেছেন। তদন্তের স্বার্থে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের নাম প্রকাশ করেনি।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা জানান, ‘দেলোয়ার, পারভেজ ও রবিউল নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেলোয়ার প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের অন্যতম হোতা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে। আমরা এসব যাচাই করছি।’

গত ৬ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলো, মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন। পরের দিন গ্রেফতার করা হয় সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এবিএম জাহিদকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জানে আলম মিলন রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, শামসুল হক শ্যামল জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ও মোস্তাফিজুর রহমান মিলন পূবালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। এছাড়া সোহেল রানা ও এমদাদুল হক খোকন জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির তত্ত্বাবধানে সমন্বিত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছিল আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠার পরই পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নফাঁস সিন্ডিকেটের সঙ্গে পাঁচ ব্যাংকারসহ আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সিন্ডিকেট জড়িত। অফিস সহকারী দেলোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার কাজী শফিকুল আলমের পিয়ন হিসেবে ২০১৬ সালে যোগদান করেন। চাকরির শুরু থেকেই তিনি প্রশ্ন তৈরি ও ছাপা হওয়ার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সুযোগে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিভিন্ন সময় চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রশ্ন তৈরির দায়িত্বে থাকা আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুবই দুর্বল। তৈরি থেকে ছাপা শুরু হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে সম্পৃক্ত থাকা অনেকেই এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে থেকে প্রশ্ন ফাঁস করতেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ার জানিয়েছে, লাখ টাকার চুক্তিতে তিনি প্রশ্ন ফাঁস করতেন। তার কাজ ছিল শুধু এক সেট প্রশ্ন বাইরে বের করে আনা। সর্বশেষ তিনি নিজে ও আহসানউল্লাহর প্রেসের কাটিং মাস্টার রবিউল ও পারভেজ মিলে এক সেট প্রশ্ন এনে সিন্ডিকেটের অপর সদস্য মোক্তারুজ্জুমান রয়েলসহ পাঁচ ব্যাংকারের হাতে তুলে দেন। তারাই সমন্বয় করে উত্তরপত্র তৈরি করে শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করতো।